পার্বত্য খাগড়াছড়িতে এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় শুরু হওয়া আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে অন্তত তিনজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংগঠনটি ভুক্তভোগী কিশোরীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, নিহতদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ এবং ঘটনাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
নিহতরা সবাই গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তারা হলেন— রামসু বাজার এলাকার থৈচিং মারমা (২০), আমতলী পাড়ার আথুইপ্রু মারমা (২১), চেং গুলি পাড়ার আখ্রাউ মারমা (২২)।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবীব পলাশ জানান, সহিংসতায় আহত ১০ জনের মধ্যে একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং বাকিদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে একটি ক্ষেত থেকে ধর্ষণের শিকার মারমা সম্প্রদায়ের এক কিশোরীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তার বাবা খাগড়াছড়ি সদর থানায় ধর্ষণের মামলা করেন। পরদিন সেনাবাহিনীর সহায়তায় একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’ ব্যানারে বিক্ষোভ, অবরোধ ও হরতাল শুরু হয়।
কিন্তু বিক্ষোভ দ্রুত উত্তেজনাপূর্ণ রূপ নেয়। গতকাল রবিবার গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি ছুড়ে। এ সময় প্রাণহানির পাশাপাশি আদিবাসীদের দোকানপাট, বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ ঘটে। সহিংসতার আশঙ্কায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সেনা ও বিজিবি মোতায়েন করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, “প্রতিবাদ দমনে নেওয়া পদক্ষেপ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এবং প্রাণঘাতী সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। যদি কোনো অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ হয়ে থাকে, সরকারকে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত করতে হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “পার্বত্য এলাকায় বারবার এ ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে, যা জনজীবন ও জানমালের ক্ষতির কারণ। অতীতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অন্তর্নিহিত কারণ নিরূপণ না হওয়ায় একই ঘটনা বারবার ঘটছে।”
আসক মনে করে, বাংলাদেশ একটি বহুজাতি ও বহুসংস্কৃতির দেশ—যেখানে বৈচিত্র্য বিভেদ নয়, বরং শক্তি। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা শুধু পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য নয়, জাতীয় ঐক্য ও দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত। সহিংসতা, ভীতি ও উসকানি কখনো সমাধান নয়।
সংগঠনটি অবিলম্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানায়। পাশাপাশি ধর্ষণের শিকার কিশোরীর নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার, নিহত ও আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের আহ্বান জানানো হয়।
এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ফয়সল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, সংঘর্ষে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেকেই আহত হয়েছেন।
খাগড়াছড়ির ঘটনাটি আবারও পাহাড়ি অঞ্চলে অস্থিরতা ও পারস্পরিক অবিশ্বাসের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করছে, সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের মাধ্যমেই শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। অন্যথায় পাহাড়ের উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।