দেড় বছরের শিশু গীতিকা এখনও জানে না তার বাবা আর কখনো ফিরে আসবে না। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার নিয়ম করে বাবার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকত সে। কিন্তু গত সপ্তাহে সেই অপেক্ষা ভেঙে গেছে নৃশংস বাস্তবতায়। মাত্র দুদিন আগেই বাবার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল তার। বোঝার বয়স হয়নি যে, সেই দেখা ছিল চিরবিদায়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে একদল জনতার পিটুনিতে নিহত হন দিপু চন্দ্র দাস (২৮)। গত বৃহস্পতিবার রাতে কারখানা থেকে ধরে নিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরে হত্যাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে তার বিবস্ত্র মরদেহ ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দিপু ভালুকার জামিরদিয়া এলাকায় অবস্থিত পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেডে কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নিহত দিপুর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়াকান্দা গ্রামে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী মেঘনা দাস, দেড় বছরের কন্যা গীতিকা, অসুস্থ বাবা-মা ও দুই ভাইকে নিয়ে ছিল তার সংসার। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
দিপুর শ্বশুর বাবু রাম দাস বলেন, “গীতিকা এখনো সারাদিন বাবার জন্য কান্না করে। মনে করে বাবা এখনই এসে ওকে আদর করবে। ওকে আমি কীভাবে বোঝাবো?” তিনি জানান, তিন বছর আগে মেয়ের বিয়েতে দিপুই তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে গত সোমবার রাতে বাড়িতে এসেছিলেন দিপু। মঙ্গলবার সারাদিন পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে বুধবার সকালে কাজে ফেরার সময় স্ত্রীকে বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার রাতে শীতের কাপড় আর মেয়ের জন্য খাবার নিয়ে ফিরবেন। সেটাই ছিল পরিবারের সঙ্গে তার শেষ কথা।
দিপুর বাবা রবি চন্দ্র দাস দুর্ঘটনার পর থেকে কর্মক্ষম নন। পরিবারটির একমাত্র সম্বল দুই শতকের পুরোনো ভিটেবাড়ি। জমিজমা বা স্থায়ী আয়ের কোনো উৎস নেই।
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার তারাকান্দা বাজারে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই অপু চন্দ্র দাস ১৪০–১৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ভালুকা থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ জানায়, এ পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত গ্রেপ্তারদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।