হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুপথযাত্রী অবস্থায়ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের হাতে হাতকড়া থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। ৭৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিক সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ছবিতে দেখা যায়, শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা এক বৃদ্ধ হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন, অথচ তাঁর একটি হাত শক্ত করে বাঁধা রয়েছে লোহার হাতকড়ায়। মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত প্রশ্ন তুলেছেন—মৃত্যুপথযাত্রী, অচেতন ও অসুস্থ একজন মানুষকে শিকলে বেঁধে রাখার প্রয়োজন কী? অনেকে এটিকে রাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতা ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, “প্রায় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ, মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা অমানবিক। এটি শুধু একজন মানুষের নয়, গোটা মানবাধিকারের প্রতি অবমাননা।”
তবে কারা কর্তৃপক্ষ ছবিটি “পুরোনো” দাবি করে জানিয়েছে, সিসিইউতে হ্যান্ডকাফ থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারা অধিদপ্তরের এআইজি (উন্নয়ন) জান্নাত-উল-ফরহাদ বলেন, “পুরোনো ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কারাবিধি অনুযায়ী বন্দিদের নিরাপত্তার স্বার্থে কখনও কখনও হাসপাতালের বেডে হ্যান্ডকাফ রাখা হয়।”
হাসপাতাল সূত্র ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। তাদের দাবি, ছবিটি ২৭ সেপ্টেম্বরের, যখন হুমায়ূন মেডিসিন ইউনিটের ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। পরদিন সকালে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর গুলশান থেকে গ্রেফতার হন নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন এবং দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
মন্ত্রীর মৃত্যু ঘিরে আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। পুত্র মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদি অভিযোগ করেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর বাবাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছেন।
সাদির দাবি, “আবু নোমান হাসপাতালের পরিচালক হয়েও বাবার চিকিৎসায় কোনো সহযোগিতা করেননি, সুযোগ-সুবিধা দেননি। তাঁর নিষ্ঠুর আচরণই বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, পরিচালক অতীতে জামায়াত-সমর্থিত ছাত্রশিবিরের সক্রিয় ক্যাডার ছিলেন, যা তাঁর সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিবারের পক্ষ থেকে এই মৃত্যু ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সাদি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “একদিন এই হত্যার বিচার হবেই।”
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বা অভিযুক্ত পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমানের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, মৃত্যুপথযাত্রী একজন বন্দিকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা যেমন অমানবিক, তেমনি চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগও গভীরভাবে তদন্ত হওয়া জরুরি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো রাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে, অসুস্থ ও বৃদ্ধ বন্দিদের মানবিক মর্যাদা রক্ষায় অবিলম্বে আইন ও প্রথার সংস্কার করতে হবে।