মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদন্ডের রায় দেওয়ার পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) এক শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে— “কোনো পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়।”
জেনেভায় দেয়া বিবৃতিতে ওএইচসিএইচআর-এর মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি বলেন, গত বছরের জুলাইয়ের সহিংসতা দমনকালে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে এই রায় নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তার ভাষায়, “ভুক্তভোগীদের জন্য এটি প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে।” তবে একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করেন, জাতিসংঘ শুরু থেকেই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী এবং এই রায় সেই অবস্থানকে আরো সংবেদনশীল করে তুলেছে।
রাভিনা জানান, ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ প্রকাশিত জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে যেভাবে দায় নির্ধারণ ও জবাবদিহির সুপারিশ করা হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় তারা সবসময় দাবি করে আসছেন— নেতৃত্বসহ সব দায়ী ব্যক্তিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার করতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের কার্যকর প্রতিকার নিশ্চিত করতে হবে। তবে বিচারপ্রক্রিয়া ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডসম্মত হওয়া জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিশেষত অনুপস্থিতিতে বিচার এবং সরাসরি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণাকে তারা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ এখন সত্য প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ এবং ন্যায়বিচারের মাধ্যমে জাতীয় পুনর্মিলনের পথে এগোবে। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অবশ্যই নিরাপত্তা খাতের রূপান্তরমূলক সংস্কার যুক্ত থাকতে হবে, যাতে অতীতের দমন-পীড়ন ও লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে। তিনি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে এই প্রয়াসে সহায়তা দিতে জাতিসংঘের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করেন।
মামলায় রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দেড় দশক ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা গত বছরের সহিংসতার মধ্য দিয়ে সরকার পতনের পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম সাবেক সরকারপ্রধান যিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলেন— এমন একটি আদালতের রায়ে, যে ট্রাইব্যুনাল তাঁর সরকারই ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।