বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিহীন অবস্থা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে উত্থাপিত এই প্রস্তাবের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকালে বিচারহীনতা এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ এমপিরা।
উত্থাপিত প্রস্তাবে ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সকে জানানো হয় যে, বাংলাদেশে অসংখ্য সাবেক সংসদ সদস্য, সাংবাদিক এবং বিচারক এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই কারাগারে রয়েছেন। প্রস্তাবে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে— “বিলম্বিত বিচার মানেই বিচার অস্বীকার করা।”
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর নথিপত্র উদ্ধৃত করে প্রস্তাবে জানানো হয় যে, বিগত সরকারের পতনের পর গত ১৫ মাসে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পুনরুত্থান ঘটেছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, এই সময়ে অন্তত ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এছাড়া দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন লেবার পার্টির প্রভাবশালী এমপি ব্যারি গার্ডিনার। ২০২৪-২৬ সেশনের এই প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত ১৩ জন সংসদ সদস্য স্বাক্ষর করেছেন। এতে শুধু সরকারি দল নয়, বরং বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ স্থানীয় প্রতিনিধিরাও সংহতি প্রকাশ করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই ধরনের প্রস্তাব উত্থাপন বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনের জন্য একটি বড় ধরনের আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার যখন বহির্বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তখন ব্রিটিশ এমপিদের এই উদ্বেগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং সাংবাদিকদের দীর্ঘমেয়াদী আটক রাখার বিষয়টি নিয়ে আগামীতে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও সোচ্চার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।