আগামী ২৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারে জান্তা সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকতেই জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং ভোটারদের উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভোটে অংশ না নেওয়া বা প্রত্যাখ্যান করা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অস্বীকার করার শামিল।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সাধারণ জনগণ সামরিক শাসনকে বৈধতা দিতে নারাজ। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে গণবর্জনের স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে জান্তা সরকার বিনোদন জগতের তারকাদের ব্যবহার করছে। উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের বিভিন্ন শহরে তারকাদের পাঠানো হয়েছে, যারা গান ও নাচের মাধ্যমে ভোটারদের উৎসাহিত করছেন।
জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং এবং তার ডেপুটি সো উইন বিভিন্ন রাজ্য সফর করে সেনাবাহিনী-সমর্থিত প্রার্থীদের সমর্থন করার আহ্বান জানাচ্ছেন। নির্বাচনী আইনে ভোটের ন্যূনতম হার নির্ধারণ না থাকায় সরকার আন্তর্জাতিক মহলকে দেখাতে চাইছে যে জনগণ তাদের পাশে আছে।
২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার প্রায় পাঁচ বছর পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সে সময় প্রেসিডেন্ট ইউ উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ বহু নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়, যাদের অনেকেই এখনো বন্দি।
জান্তা সরকার এবার তিন ধাপে ভোট আয়োজন করছে। প্রথম ধাপ ২৮ ডিসেম্বর, দ্বিতীয় ধাপ ১১ জানুয়ারি এবং জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাকি ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে ৫৭টি দল অংশ নিলেও সেনা-সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনীর জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকায় ইউএসডিপিকে সরকার গঠনের জন্য মাত্র ২৬ শতাংশ ভোট পেলেই যথেষ্ট।
পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘ এই নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু নয় বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে চীন, রাশিয়া ও ভারতের সমর্থনকে পুঁজি করে জান্তা সরকার তাদের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই নির্বাচনের মূল লক্ষ্য হলো মিন অং হ্লাইংকে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসানো।
মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে জনগণের অনাগ্রহ, আন্তর্জাতিক সমালোচনা এবং জান্তার হুমকি—সব মিলিয়ে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে উঠছে।