সর্বশেষ

আফগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই ও মানবাধিকার বিষয়ক পাঠ্য নিষিদ্ধ করেছে তালেবান

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৫৪
আফগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই ও মানবাধিকার বিষয়ক পাঠ্য নিষিদ্ধ করেছে তালেবান

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের লেখা বই এবং মানবাধিকার, যৌন হয়রানি সম্পর্কিত পাঠ্যপুস্তক সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে তালেবান সরকার। এই পদক্ষেপটি দেশটিতে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ ও নারীর শিক্ষার অধিকারকে আরও সীমিত করেছে।

 

উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পাঠানো নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘শরিয়াবিরোধী ও তালেবান নীতির পরিপন্থী’ মোট ৬৮০টি বই সরাতে হবে। এর মধ্যে নারীদের লেখা প্রায় ১৪০টি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ তালিকায় এমন বই রয়েছে, যেমন ‘সেফটি ইন দ্য কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি’। এছাড়াও ১৮টি বিষয়ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো যাবে না, যার মধ্যে মানবাধিকার, যৌন হয়রানি, জেন্ডার স্টাডিজ, দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন এবং উইমেন’স সোসিওলজি অন্তর্ভুক্ত।

 

তালেবান প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব বিষয় ‘শরিয়াহ ও কাঠামোর নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক’। তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় আলেম ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

চার বছর আগে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তালেবান সরকার একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করেছে। বিশেষ করে নারীদের শিক্ষায় বিরাট সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির পর তাদের শিক্ষাগ্রহণ বন্ধ, ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা কোর্স বন্ধ হওয়ায় পেশাগত প্রশিক্ষণের সুযোগও শেষ হয়েছে। এবার সরাসরি নারীবিষয়ক পাঠ্যপুস্তকও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

 

ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও আফগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, এর উদ্দেশ্য হলো আফগান পাঠ্যসূচিতে ‘ইরানি বিষয়ের অনুপ্রবেশ’ রোধ করা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৬৭৯টি বইয়ের তালিকায় এর মধ্যে ৩১০টি বই ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।

 

কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জানান, এই নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা নিজে নতুন পাঠ্যসূচি তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে বৈশ্বিক মানদণ্ডে তা তৈরি করা কতটা সম্ভব, তা প্রশ্নবিদ্ধ।

 

তালেবান ক্ষমতায় ফেরার আগে বিচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী ও নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা লেখক জাকিয়া আদেলি বলেছেন, “তালেবানের নারীবিদ্বেষী মানসিকতা এবং নীতির কারণে, যখন নারীর পড়াশোনার অধিকারই নেই, তখন তাদের মতামত ও লেখালেখি দমন করা স্বাভাবিক।”

 

এ ধরনের পদক্ষেপ আফগান শিক্ষাব্যবস্থায় এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছে। ইরানি লেখক ও অনুবাদকদের বই আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশ্বিক একাডেমিক সংযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করত। তা বাদ দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও গবেষণার সুযোগ সীমিত হয়েছে।

 

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি আফগান তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে মন্তব্য চেয়েছিল, তবে এ বিষয়ে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি।

 

তালেবানের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক শিক্ষাব্যবস্থা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চশিক্ষায় এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তাভাবনা এবং বৈচিত্র্যময় জ্ঞান আহরণের সুযোগকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করবে।

সব খবর