সৌদি আরবের বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) কীভাবে রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বাররক্ষক থেকে দেশের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হয়ে উঠলেন, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিস্তর আলোচনা চলছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে তার বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজ সৌদি সিংহাসনে বসার পর থেকেই এমবিএস ধাপে ধাপে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে শুরু করেন। প্রথমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, পরে অর্থনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা ‘ভিশন ২০৩০’—সবকিছুতেই তার প্রভাব বাড়তে থাকে।
২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমান ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে মনোনীত হন, যা অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ, তখনও রাজপরিবারে আরও অভিজ্ঞ ও বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা জীবিত ছিলেন।
এরপর থেকেই সৌদি রাজনীতিতে একের পর এক নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। রাজপরিবারের বহু সদস্য, ব্যবসায়ী ও ধর্মীয় নেতাকে দুর্নীতির অভিযোগে আটক করা হয়। রিয়াদের বিলাসবহুল হোটেল রিটজ-কার্লটনে তাদের বন্দি করে রাখা হয়, যা কার্যত একটি ‘রাজকীয় শুদ্ধি অভিযান’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এমবিএস তার বাবাকে কার্যত ‘নজরবন্দি’ করে রেখেছেন। সালমান বিন আব্দুল আজিজের স্বাস্থ্য ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি সহ একাধিক সূত্রে বলা হয়েছে, এমবিএস এখন এমন এক অবস্থানে পৌঁছেছেন, যেখানে তিনি দেশের পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, এমনকি মানবাধিকার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এককভাবে নিচ্ছেন।
জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড, ইয়েমেন যুদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ একাধিক ইস্যুতে এমবিএস-এর ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনা রয়েছে।
তবে একইসঙ্গে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক খোলনলচে বদল, নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার, বিনোদন খাতে সংস্কার—এসব উদ্যোগে তার আধুনিকায়নের ভাবমূর্তিও তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি রাজপরিবারে এখন আর ক্ষমতার ভারসাম্য নেই—বরং একক নিয়ন্ত্রণের যুগে প্রবেশ করেছে দেশটি। এমবিএস-এর উত্থান শুধু সৌদি রাজনীতির নয়, মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।