সর্বশেষ

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সংঘাত

সীমান্তের বাইরে বিস্তৃত এক সংকট

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২১:০৩
সীমান্তের বাইরে বিস্তৃত এক সংকট

দুই প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা শুধু সীমান্ত দ্বন্দ্ব নয়, বরং এটি একটি গভীর রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও মানবিক সংকটের প্রতিফলন। তোরখাম সীমান্তে গোলাগুলি, কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং অভিবাসন নীতির কঠোরতা এসব মিলিয়ে এই সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।

 

পাকিস্তান সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, অবৈধভাবে বসবাসরত আফগান নাগরিকদের দেশত্যাগ করতে হবে। এর ফলে লাখ লাখ আফগান উদ্বাস্তু, যারা দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তানে বসবাস করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। পাকিস্তানের দাবি, এসব অভিবাসীর মধ্যে অনেকে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অন্যদিকে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার এই পদক্ষেপকে অমানবিক ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছে।

 

এই দ্বন্দ্বের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের আস্থাহীনতা। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পাকিস্তান তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাস্তবে তালেবান সরকার পাকিস্তানের নিরাপত্তা উদ্বেগকে যথাযথভাবে আমলে নেয়নি। বিশেষ করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (TTP)-এর কার্যক্রম নিয়ে পাকিস্তানের অভিযোগ রয়েছে যে, আফগানিস্তান তাদের আশ্রয় দিচ্ছে। তালেবান সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও বাস্তবতা বলছে, সীমান্ত অঞ্চলে TTP-এর উপস্থিতি ও হামলা বেড়েছে।

 

অন্যদিকে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং আন্তর্জাতিক চাপ এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। অভিবাসন নীতির কঠোরতা অনেকাংশে জনমতকে শান্ত রাখার চেষ্টা, কিন্তু এর মানবিক মূল্য অনেক বেশি। আফগান উদ্বাস্তুদের মধ্যে রয়েছে নারী, শিশু, বৃদ্ধ যারা কোনো অপরাধে জড়িত নন, বরং যুদ্ধ ও দারিদ্র্যের শিকার।

 

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হলো উভয় দেশকে সংলাপে বসানো, মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন নীতিতে ভারসাম্য আনা। জাতিসংঘ, ওআইসি, এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলোর উচিত এই সংকটকে শুধু নিরাপত্তা নয়, মানবিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা।

 

বাংলাদেশের মতো দেশ, যারা অভিবাসন, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় আগ্রহী, তাদেরও উচিত এই সংকটের প্রতি নজর রাখা। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনো অস্থিরতা পরোক্ষভাবে পুরো অঞ্চলের ওপর প্রভাব ফেলে।

 

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সংঘাতের সমাধান শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং এটি একটি আস্থার সংকট। সীমান্তে কাঁটাতার নয়, দরকার বিশ্বাসের সেতু। আর সেই সেতু নির্মাণে প্রয়োজন আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংলাপ, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা। সংঘাত নয়, সমঝোতাই হতে পারে এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ।

সব খবর

আরও পড়ুন

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ইওয়েল মোকিয়র, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ইওয়েল মোকিয়র, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের হামলার জবাবে আফগান বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে নিহত ৫৮ পাকিস্তানি সেনা

ডুরান্ড লাইনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের হামলার জবাবে আফগান বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে নিহত ৫৮ পাকিস্তানি সেনা

ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়, শান্তিতে নোবেল পেলেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো

ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়, শান্তিতে নোবেল পেলেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো

বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা মিশনের এক-চতুর্থাংশ ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত, ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

জাতিসংঘে তহবিল সংকট বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা মিশনের এক-চতুর্থাংশ ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত, ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত পল কাপুর

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত পল কাপুর

এক ভিসায় উপসাগরীয় ৬ দেশ ভ্রমণের সুযোগ, জিসিসির নতুন উদ্যোগ

এক ভিসায় উপসাগরীয় ৬ দেশ ভ্রমণের সুযোগ, জিসিসির নতুন উদ্যোগ

চিকিৎসায় নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের তিন বিজ্ঞানী

চিকিৎসায় নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের তিন বিজ্ঞানী

পাকিস্তান থেকে ব্যবসা গুটাচ্ছে পিঅ্যান্ডজি, উদ্বেগে ভোক্তারা

পাকিস্তান থেকে ব্যবসা গুটাচ্ছে পিঅ্যান্ডজি, উদ্বেগে ভোক্তারা