বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সম্প্রতি তীব্র বিতর্ক হয়েছে। ব্রিটিশ এমপিরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ, সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং একটি ব্রিটিশ এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চলছে। লেবার পার্টির এমপি ব্যারি গার্ডিনার ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ জানান। ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রশাসনের সঙ্গে সংখ্যালঘু সুরক্ষা নিয়ে যোগাযোগ রাখছে।
২০২৫ সালের জুলাইয়ে এমপি বব ব্ল্যাকম্যান ও বাংলাদেশ ইউনিটি ফোরামের আয়োজনে একটি সংসদীয় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সাংবিধানিক সংকট তুলে ধরা হয়। বক্তারা মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনাকে “গণতন্ত্রের ওপর নজিরবিহীন আঘাত” বলে অভিহিত করেন। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ICC) নির্বিচার গ্রেপ্তার ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ পাঠানো হয়।
যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (FCDO) জানিয়েছে, বাংলাদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন জরুরি। ব্রিটিশ এমপিরা অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি রোডম্যাপ প্রকাশ ও দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিরোধী মতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বাংলাদেশ সরকারের অভিযোগে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে অর্থ সচিব ও সিটি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি অভিযোগগুলো “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার” বলে প্রত্যাখ্যান করেন।
২০২৪ সালের নভেম্বরে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (APPG) কমনওয়েলথ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা হাসিনা সরকারের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট বলে সমালোচিত হয়। প্রতিবেদনটি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রত্যাহার করা হয়। লেবার এমপি রূপা হক একে “অপ্রাসঙ্গিক ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণ” বলে মন্তব্য করেন।
এই বিতর্ক বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিল বাস্তবতা তুলে ধরেছে। যুক্তরাজ্যের সংসদে এমন আলোচনার প্রভাব আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও কূটনৈতিক অবস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে।