জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ চিত্র। আফগানিস্তানের প্রতি ১০ পরিবারের ৯টিই বর্তমানে হয় খাদ্য সংকটে ভুগছে, নয়তো ঋণের বোঝায় জর্জরিত। দেশটির অর্থনীতি ও মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বিশেষ করে পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে পাকিস্তান ও ইরান থেকে ফিরে আসা লাখো শরণার্থীর চাপ দেশের অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। ইউএনডিপি জানিয়েছে, এ বছর প্রায় ১৫ লাখ আফগানকে জোরপূর্বক দেশে ফিরতে হয়েছে। ফিরে আসা এসব মানুষ তীব্র অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার আগেই আফগানিস্তান অর্থসংকটে ছিল। দেশটির মোট ব্যয়ের ৭৫ শতাংশই আসত বিদেশি ত্রাণ সহযোগিতা থেকে। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর সেই সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। অর্থের অভাবে বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, কর্মীদের পারিশ্রমিক দেওয়া যাচ্ছে না। কাজ হারিয়ে লাখ লাখ মানুষ পথে বসেছেন।
খাদ্য সংকট ও অপুষ্টির কারণে হাসপাতালগুলোতে অসুস্থ শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি পরিবার খাবারের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বাদ দিচ্ছে। অনেক পরিবার ঋণ নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
৪৮ হাজার পরিবারের ওপর করা জরিপে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশেরও বেশি প্রত্যাবর্তনকারী পরিবার ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে। এসব পরিবারের গড় ঋণের পরিমাণ ৩৭৩ থেকে ৯০০ ডলার পর্যন্ত। অথচ তাদের গড় মাসিক আয় মাত্র ১০০ ডলার। ফলে ঋণের ফাঁদে পড়ে তারা আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।
সহায়তা হ্রাস ও নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আগস্ট মাসের ভয়াবহ ভূমিকম্পসহ বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশটির সংকটকে আরও গভীর করেছে। বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রত্যাবর্তনকারীদের জায়গা দিতে গিয়ে আফগানিস্তান হিমশিম খাচ্ছে।
ইউএনডিপি সতর্ক করেছে, আফগানিস্তানের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাগুলোতে সম্পদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসার অভাবে মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হচ্ছে।