দুই বছর অন্ধকারে থাকার পর আবার আলোয় ভরে উঠল যিশুর জন্মভূমি বেথলেহেম। ইসরায়েলি অবরোধ, গাজায় গণহত্যা ও পশ্চিম তীরজুড়ে সহিংসতার মাঝেও এ বছরের বড়দিনের আলো জ্বলা ফিলিস্তিনিদের মনে এক ঝলক আশা নিয়ে এসেছে যদিও শোক ও বেদনার ভার এখনও তীব্রভাবে উপস্থিত।
গত দুই বছর ইসরায়েলের হামলা ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে বেথলেহেমে সব বড়দিনের উৎসব বাতিল ছিল। এবার ম্যানজার স্কোয়ারে সীমিত আয়োজনে বড়দিনের গাছের আলো জ্বালানো হলেও পুরো শহরের আনন্দ ছিল সংযত। হাজারো মানুষ জমায়েত হয়ে স্তোত্র, প্রার্থনা ও কোরাস সংগীতে অংশ নেন। এটাই ছিল এ বছরের একমাত্র আনুষ্ঠানিক উৎসব।
ইভানজেলিক্যাল লুথেরান চার্চের রেভারেন্ড মুনথের আইজ্যাক আল জাজিরাকে বলেন, এবারের উদযাপন “আনন্দ ও গভীর শোকের মিশ্রণ”। শহর সাজানো হলেও প্রত্যেক ফিলিস্তিনির হৃদয়ে গাজার ধ্বংসযজ্ঞের বেদনা। তাঁর ভাষায়, “আমরা বেঁচে আছি, এটাই আজকের বার্তা।”

বেথলেহেমের মেয়র মাহের এন কানাওয়াতি বলেন, দীর্ঘ অন্ধকারের পর শহরের আলো ফেরা ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি প্রতীকী মুহূর্ত। “এই আলো আমাদের আশার প্রতীক, এবং সেই বার্তা আমরা গাজাসহ পুরো বিশ্বে পৌঁছে দিতে চাই।” তিনি বিশ্বকে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
শহরের অর্থনৈতিক সংকটও উৎসবের ছায়ায় স্পষ্ট। কঠোর ইসরায়েলি চেকপয়েন্ট, চলাচলে বাধা এবং পর্যটনের পতনে বেথলেহেমের ব্যবসা–বাণিজ্য প্রায় অচল। বহু প্রজন্মের পুরোনো দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী অ্যাড্রিয়ান হাবিবে বলেন, “দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যটন নেই। এই আলো অন্তত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে একদিন সব ফিরবে।”
বেথলেহেম চেম্বার অব কমার্স জানিয়েছে, শহরটি গত দুই বছরে পর্যটক কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ, দিনে প্রায় ১৫ লাখ ডলার ক্ষতি হয়েছে। প্রতিনিধি সামির হাজবুন জানান, “বেকারত্ব ৩৪ শতাংশে পৌঁছেছে, আর দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ।”

এই পরিস্থিতিতেই বিভিন্ন শহর ও ইসরায়েলের ভেতরের ফিলিস্তিনিরা চেকপয়েন্ট পেরিয়ে বেথলেহেমে আসছেন। রামাল্লা থেকে আসা ইয়ারা খলিল বলেন, “গাজার কষ্ট আমাদের হৃদয়ে রয়ে গেছে, কিন্তু দুই বছর পর আলো জ্বলতে দেখা এক ধরনের মানসিক শক্তি।”
শহরের হোটেলগুলোও পর্যটকদের ফেরা নিয়ে আশাবাদী। ২০ ডিসেম্বরের পর প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার দর্শনার্থী আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে—যা অর্থনীতিকে কিছুটা প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারে।
বেথলেহেমের বড়দিন এখন শুধু উৎসব নয় বরং এটি টিকে থাকার ঘোষণা, প্রতিরোধের প্রতীক এবং বিশ্বের প্রতি একটি আহ্বানঃ
আমরা আছি, বেথলেহেম খোলা—এসে আমাদের সঙ্গে দাঁড়ান।