ইস্তানবুলে শান্তি আলোচনা চলাকালে আফগানিস্তানের স্পিন বোলদাক অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার অভিযোগ তুলেছে তালেবান সরকার। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) আফগান তালেবান জানায়, তারা এখনো পাল্টা হামলা চালায়নি, আলোচনার প্রতি সম্মান ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে।
আফগান তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে তৃতীয় দফার আলোচনা ইস্তানবুলে শুরু হয়েছে। কিন্তু আজ বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী আবারও স্পিন বোলদাকে গুলি চালিয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ইসলামিক আমিরাতের বাহিনী এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, আলোচনার প্রতি সম্মান ও সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে।”
পূর্ববর্তী চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ
তালেবান আরও জানায়, আগের দফার আলোচনায় দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর এবং আগ্রাসন থেকে বিরত থাকার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের এই হামলা সেই চুক্তির লঙ্ঘন বলে দাবি করেছে আফগানিস্তান।
এএফপি সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান থেকে ছোড়া গোলাবর্ষণে হালকা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় এবং তা সরাসরি বেসামরিক এলাকাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। আফগান সামরিক সূত্র বলছে, হামলা ১০ থেকে ১৫ মিনিট স্থায়ী হয় এবং এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পাকিস্তানের পাল্টা দাবি
পাকিস্তান সরকার দাবি করেছে, আফগানিস্তান থেকেই সীমান্তে আগুন ছোড়া হয়েছিল এবং তাদের হামলা ছিল ‘পরিমিত প্রতিক্রিয়া’। ইসলামাবাদ আফগানিস্তানকে সীমান্তে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য দায়ী করে আসছে, যদিও তালেবান প্রশাসন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সম্পর্কের অবনতি ও সাম্প্রতিক সংঘর্ষ
গত মাসে কাবুলে বিস্ফোরণের পর সীমান্তে সংঘর্ষে অন্তত ৭০ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৫০ জনের বেশি ছিলেন আফগান বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এটি ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক ক্রমাগত অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ ও নিরাপত্তা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস বাড়ছে।
চুক্তি ও আলোচনা
গত ১৯ অক্টোবর কাতারে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে গত সপ্তাহে তুরস্কে চুক্তির বিস্তারিত চূড়ান্ত করতে গিয়ে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে। উভয় পক্ষই একে অপরকে ‘সৎভাবে না চলার’ অভিযোগ করে।
তৃতীয় দফার আলোচনা বৃহস্পতিবার ইস্তানবুলে পুনরায় শুরু হয়েছে। তবে দুই পক্ষই সতর্ক করেছে, আলোচনা ব্যর্থ হলে আবারও সংঘর্ষ শুরু হতে পারে।
এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শান্তি আলোচনার মাঝেও সংঘর্ষের ঘটনা প্রমাণ করে, রাজনৈতিক সমঝোতার পথ এখনো কঠিন। আন্তর্জাতিক মহল পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে, যাতে দুই দেশ সংঘর্ষ নয়, সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে পারে।