তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় রোববার বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। আজ সোমবার ঘোষিত হতে যাওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে এই বিক্ষোভ হয়, যেখানে সিএইচপি’র ২০২৩ সালের কংগ্রেসকে প্রক্রিয়াগত অনিয়মের অভিযোগে বাতিল ঘোষণা করে দলটির নেতা ওজগুর ওজেলকে পদচ্যুত করার আশঙ্কা রয়েছে।
আঙ্কারার বিক্ষোভস্থল থেকে সরাসরি প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, হাজারো মানুষ তুর্কি পতাকা ও সিএইচপি’র ব্যানার হাতে “এরদোয়ানের পদত্যাগ চাই” স্লোগান দিচ্ছে। প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, সরকার বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করছে এবং ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চাইছে।
বিক্ষোভে ভাষণ দিতে গিয়ে সিএইচপি নেতা ওজেল বলেন, সরকারের এই পদক্ষেপ গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে। তিনি অভিযোগ করেন, মামলাটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এর মাধ্যমে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে। ওজেল বলেন, “এটি আসলে এক ধরনের অভ্যুত্থান— ভবিষ্যতের রাষ্ট্রপতি ও সরকারকে সরানোর অভ্যুত্থান। আমরা প্রতিরোধ করব, প্রতিরোধ করব, প্রতিরোধ করব।” তিনি আরও দাবি করেন, সরকারের বৈধতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ এবং দ্রুত সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
গত এক বছরে তুর্কি কর্তৃপক্ষ সিএইচপি’র অন্তত ৫০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে, যার মধ্যে রয়েছেন ১৭ জন মেয়রও। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলু—যিনি এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত—তাঁকেও গত মার্চে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং আর্থিক বাজারেও ধ্বস নামে।
রোববারের বিক্ষোভে ইমামোগলুর একটি চিঠি পাঠ করা হয়, যেখানে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগ আনেন। তিনি লেখেন, “সরকার বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে নির্বাচনকে আগেভাগেই নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এ দেশের ‘আমি’র রাজনীতি শেষ হবে, শুরু হবে ‘আমরা’র রাজনীতি। একজন হারবে, সবাই জিতবে।”
আদালত আজ যে রায় দেবে তা তুরস্কের বৃহত্তম বিরোধী দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে রায় স্থগিত করা হলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও দীর্ঘায়িত হবে। সরকার দাবি করছে, বিচারব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করছে; কিন্তু সমালোচকদের অভিযোগ, এরদোয়ান ধাপে ধাপে বিরোধীদের ধ্বংস করে নিজের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরছেন। রবিবারের জনসমুদ্র তাই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে—তুরস্কের রাজনৈতিক সংকট সমাধান এখনো বহুদূর বাকি।