সর্বশেষ

বাদ নিতাই রায়ের ছেলে দেবাশীষ রায় চৌধুরী

হাই কোর্টে স্থায়ী হলেন জুলাই সহিংসতার পরে নিয়োগ পাওয়া ২২ বিচারপতি

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:১৮
হাই কোর্টে স্থায়ী হলেন জুলাই সহিংসতার পরে নিয়োগ পাওয়া ২২ বিচারপতি

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ২৩ বিচারকের মধ্যে ২২ জনকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। শপথ গ্রহণের দিন থেকে তাদের স্থায়ী নিয়োগ কার্যকর হবে।

 

তবে নিয়োগ পাওয়া ২৩ জনের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন একজন—বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর ছেলে বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী। প্রজ্ঞাপনের ভাষ্যে জানা যায়, তার বয়স ৪৫ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তাকে স্থায়ী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদিও তিনি অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবেই দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবেন। এ সিদ্ধান্ত ঘিরে বিচারাঙ্গনে নানান আলোচনা চলছে, বিশেষ করে বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী নিয়োগে বয়সের শর্ত নিয়ে ফের বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

 

এর আগে, ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জনকে অনধিক দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন এবং ৯ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি তাদের শপথ পাঠ করান। জুলাই–আগস্টের সহিংসতার পরপরই নতুন বিচারক নিয়োগকে অনেকেই “বিচার ব্যবস্থার দ্রুত পুনর্গঠন” হিসেবে দেখেছিলেন। এবার সেই তালিকা থেকে মাত্র একজন বাদ পড়ে ২২ জন স্থায়ী নিয়োগ পেলেন।

 

আইনজীবী মহল বলছে, জুলাই পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশের বিচার বিভাগের ওপর নজিরবিহীন চাপ তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মদদে আদালত এলাকায় মব সৃষ্টি করে হাইকোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। সমালোচকরা বলছেন, বিচারবিভাগ নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে স্বাধীন থাকার কথা হলেও তখনকার পরিস্থিতি তার ঠিক বিপরীত ইঙ্গিত দেয়। সে সময় নতুন করে যেসব বিচারপতিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্য থেকেই এবার ২২ জনকে স্থায়ী করা হলো। এই ঘটনাকে ঘিরে আবারও বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

 

মঙ্গলবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে যাদের স্থায়ী করা হয়েছে, তারা হলেন—
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন, বিচারপতি মো. মনসুর আলম, বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর, বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা, বিচারপতি মো. যাবিদ হোসেন, বিচারপতি মুবিনা আসাফ, বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলাম, বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা, বিচারপতি মো. আবদুল মান্নান, বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদী, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ, বিচারপতি মো. হামিদুর রহমান, বিচারপতি নাসরিন আক্তার, বিচারপতি সাথীকা হোসেন, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেন, বিচারপতি মো. তৌফিক ইনাম, বিচারপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ সুমন, বিচারপতি শেখ তাহসিন আলী, বিচারপতি ফয়েজ আহমেদ, বিচারপতি মো. সগীর হোসেন ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী।

 

স্থায়ী নিয়োগ পাওয়ার পর বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাদের শপথ পাঠ করান। বিচারপতিরা সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের শপথ গ্রহণ করেছেন।

 

আইনজীবী মহলের একটি অংশ মনে করছেন, এই নিয়োগ বিচারব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনবে এমন ধারণা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ জুলাই পরবর্তী অস্থির সময়ে রাজনৈতিক চাপের মধ্যেই এই বিচারপতিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সমালোচকদের অভিযোগ, নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকদের মধ্যে বহুজন রাজনৈতিকভাবে সুবিধাভোগী বা সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ফলে তারা কতটা নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারবেন তা নিয়ে খোদ আদালত পাড়ার ভেতরেই সংশয় রয়েছে।

 

আইন বিশেষজ্ঞদের অপর অংশ বলছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানস্বীকৃত হলেও সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে সেই স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর যেভাবে পূর্বতন কয়েকজন বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং পরপরই নতুন নিয়োগ দেওয়া হয় তা ‘ক্ষমতাকেন্দ্রিক নিয়োগ’ বিতর্ককে আরও জোরালো করেছে। তাদের মতে, বিচারক হিসেবে ব্যক্তিগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনা ও নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থাকলে ন্যায়বিচার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।

 

সুতরাং, এই স্থায়ী নিয়োগ বিচারব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনতে পারবে কিনা, কিংবা বিচারকার্যে নিরপেক্ষতার মান বজায় থাকবে কিনা তা এখন সময়ই বলে দেবে বলে মন্তব্য করছেন পর্যবেক্ষকরা।

 

এদিকে, দেবাশীষ রায় চৌধুরী বাদ যাওয়াকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে। বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, বয়সের কারণ দেখানো হলেও বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে সরকারিভাবে কেবল বয়সের শর্ত পূরণ না করার বিষয়ই নিশ্চিত করা হয়েছে।

সব খবর