ক্যাঙ্গারু কোর্ট হলো এমন এক আদালত, যা আইন ও ন্যায়বিচারের স্বীকৃত মানদণ্ড উপেক্ষা করে। এটি সাধারণত অনানুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় এবং এর রায় আগেই নির্ধারিত থাকে। ফলে বিচার প্রক্রিয়া কেবলমাত্র একটি নাটকীয়তা হয়ে দাঁড়ায়। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্যাঙ্গারু কোর্ট আসলে ন্যায়বিচারের প্রতি বিদ্রূপ, যেখানে অভিযুক্তের অধিকার ও যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়।
শব্দটির উৎপত্তি উনিশ শতকের আমেরিকায়। ১৮৪১ সালে নিউ অরলিন্সের ডেইলি পিকায়ুন পত্রিকায় প্রথমবার “ক্যাঙ্গারু কোর্ট” শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তখন কিছু লিঞ্চিং বা অবৈধ বিচারকে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়, “ক্যাঙ্গারু” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল আদালতের অস্বাভাবিক লাফঝাঁপ ও অন্যায্য প্রক্রিয়ার প্রতীক হিসেবে। ১৮৫০–১৮৫৫ সালের মধ্যে শব্দটি আরও জনপ্রিয় হয় এবং পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হতে থাকে।
বৈশিষ্ট্য:
- রায় আগেই ঠিক করা থাকে।
- অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয় না।
- আইনগত প্রক্রিয়া ও প্রমাণ উপেক্ষা করা হয়।
- আদালত সাধারণত বৈধ কর্তৃপক্ষ নয়, বরং রাজনৈতিক বা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর হাতিয়ার।
ইতিহাসে বহু বিচারকে ক্যাঙ্গারু কোর্ট বলা হয়েছে।
- স্ট্যালিন যুগের সোভিয়েত ইউনিয়ন: রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা ও শো ট্রায়াল।
- নাজি জার্মানির পিপলস কোর্ট: হিটলারের শাসনকালে বিরোধীদের দ্রুত মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত আদালত।
- উত্তর কোরিয়ার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল: রাজনৈতিক বন্দিদের বিরুদ্ধে গোপন বিচার।
- দক্ষিণ আফ্রিকার এপার্টহেইড যুগ: বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সাজানো বিচার।
- সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত কিছু বিশেষ ট্রাইব্যুনালকেও সমালোচকরা ক্যাঙ্গারু কোর্ট বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ক্যাঙ্গারু কোর্ট শব্দটি আজ বিশ্বজুড়ে অন্যায্য ও সাজানো বিচার প্রক্রিয়ার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এ ধরনের আদালতকে চিহ্নিত করা এবং প্রতিরোধ করা জরুরি।