আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংঘটিত গুম-খুন ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের হওয়া ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ তিন মামলায় হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।
সকাল ৭টার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রিজনভ্যানে করে সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। এ সময় তারা সাধারণ পোশাকে ছিলেন। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। পরে সকাল ১০টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রিজনভ্যানে তুলে ঢাকা সেনানিবাসের সাবজেলে নিয়ে যায়।
কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, সেনানিবাসের ওই সাবজেলে (উপকারাগার) কর্মকর্তাদের রাখার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।
এই তিন মামলায় মোট ২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকীসহ ১০ জন পলাতক আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন—
মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজাহার সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর রাফাত বিন আলম মুন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এই তিন মামলার মধ্যে দুটি করা হয়েছে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেল ও সেনাবাহিনীর জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) আটকে রেখে নির্যাতন ও গুমের ঘটনায়। অপর মামলাটি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় ২৮ জনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের হয়েছে।
৮ অক্টোবর প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর ১১ অক্টোবর সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করে।
এ ঘটনায় সেনা সদর, ট্রাইব্যুনাল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে কঠোর নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে।