সর্বশেষ

প্রচ্ছদ : হু আর ইউ

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৫
প্রচ্ছদ : হু আর ইউ

তিতাস একটি নদীর নাম : অদ্বৈত মল্লবর্মণ। প্রচ্ছদ : রণেন আয়ন দত্ত।
একা এবং কয়েকজন : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। প্রচ্ছদ : পূর্ণেন্দু পত্রী।
ওয়ারিশ : শওকত আলী। প্রচ্ছদ : মঈন আহমেদ।
রণেন আয়ন দত্ত যদি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ বইয়ের প্রচ্ছদ বানানোর গল্পটা লিখতেন?
পূর্ণেন্দু পত্রী যদি ‘একা এবং কয়েকজন’ বইয়ের প্রচ্ছদ বানানোর গল্পটা লিখতেন?
মঈন আহমেদ যদি ‘ওয়ারিশ’ বইয়ের প্রচ্ছদ বানানোর গল্পটা লিখতেন?
লিখেন নাই।
 

ঘটনাক্রমে আমি ‘ওয়ারিশ’ বইয়ের প্রচ্ছদ বানানোর গল্পটা জানি। অফসেট যুগের সেরা একটা প্রচ্ছদ। কিন্তু গল্পটা আমি বলব না। মঈন আহমেদ জীবিত আছেন। স্বনির্বাসিত প্রচ্ছদশিল্পী এখন ‘কঠিন’ গল্প উপন্যাস লিখেন। বই প্রকাশ করেছেন চারটা। সবকটা বইয়ের প্রচ্ছদ আমি করেছি। মঈন আহমেদকে এখানে বলে রাখলাম, ‘ওয়ারিশ’-এর প্রচ্ছদ বানানোর গল্পটা লিখতে।

 


‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ব্লক যুগের প্রচ্ছদ। সেটা কেমন? ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ বইয়ের এর থেকে ভালো প্রচ্ছদ করা কি সম্ভব? আমাদের দেশেই অন্তত তিরিশজন প্রকাশক ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছেপেছেন, বইয়ের মুদ্রণ স্বত্ব বিলোপ হলে পর। নানা ধরনের প্রচ্ছদ হয়েছে। সাত-আটটা প্রচ্ছদ আমি করেছি। হয় নাই। এরকমের একটা প্রচ্ছদের আইডিয়া কী করে আসে মাথায়, রণেন আয়ন দত্ত কি বলে গেছেন? কোনও সাক্ষাৎকারে কেউ প্রশ্ন করেন নাই? আমি জানি না।
 

‘একা এবং কয়েকজন’ও ব্লক যুগের প্রচ্ছদ। সেরা সেরা সেরা। অল্প রঙে কয়েকটা হরফ দিয়ে কী করে ‘একা এবং কয়েকজন’ নির্মাণ করা যায়, সে কলা যোগ কৌশল বোধ করি আয়ত্তে ছিল কেবল পূর্ণেন্দু পত্রীর। বাংলা বইয়ের এইরকম স্পাইন আর দেখি নাই। অন্যকিছু প্রচ্ছদ চিন্তার কথা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন পূর্ণেন্দু পত্রী। ‘একা এবং কয়েকজন’-এর রেফারেন্স কোথাও পাই নাই। একে আমার পড়াশোনা কম, আবার চোখে নাও পড়ে থাকতে পারে। পূর্ণেন্দু পত্রীর বানানো একটা প্রচ্ছদের গল্প বলি এখানে। কবিতার বই। কবির নাম মনে নাই, বইয়ের নাম মনে নাই। বিষ্ণু দে-র বই ধরে নিয়ে বলি। সেই বইয়ের প্রচ্ছদপটে বিশেষ কোনও এলাকার মাটির রং চেয়েছিলেন কবি। প্রচ্ছদশিল্পী কবি বন্ধুর অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন। সেই এক যুগ। কাঠের ব্লক, জিঙ্কের ব্লক করে প্রচ্ছদ ছাপা হতো। এক রং, দুই রঙের প্রচ্ছদ বেশি হতো। প্রচ্ছদশিল্পীরা প্রচ্ছদ ছাপার সময় সশরীরে প্রেসে উপস্থিত থাকতেন উদ্দিষ্ট রং মিলল কী না দেখতে। ওস্তাদ সব মেশিনম্যান ছিলেন, রং মিলিয়ে বাড়িয়ে কমিয়ে ঠিকঠাক রংটা বানিয়ে তারা ঋণী করে রাখতেন প্রচ্ছদশিল্পীকে। বিষ্ণু দের সেই বইয়ের প্রচ্ছদের রং নিয়ে বাঁধল বিপত্তি। নির্দিষ্ট সেই এলাকার মাটির রং বানিয়ে লে আউট করেছেন পূর্ণেন্দু পত্রী, প্রেসের কালিতে সেই রং কিছুতে হচ্ছে না। এই রং ওই রং মেশাচ্ছেন ‘ওস্তাদ’ (কলকাতায় কী বলে? গুরু?), চেইন স্মোকার পূর্ণেন্দু পত্রী একটার ল্যাজে একটা সিগারেট ধরাচ্ছেন, ছাপাই কালি কিছুতে সেই মাটির রঙের ধারেকাছে যাচ্ছে না। অস্থির পূর্ণেন্দু পত্রী একসময় প্রেস থেকে বের গেলেন। গেলেন তো গেলেন, ফিরলেন আর ছয় না আট ঘণ্টা পরে। কলকাতার কিছু দূরে সেই এলাকায় চলে গিয়েছিলেন। ট্রেনে। মাটির ঢেলা নিয়ে ফিরেছেন। কাঙ্খিত রঙের মাটির ঢেলা। এবার কেরামতি দেখালেন ওস্তাদ (গুরু)। মাটির ঢেলা দেখে রং বানালেন। বইয়ের প্রচ্ছদ মেশিনে উঠল।

 


‘একা এবং কয়েকজন’ বইয়ের প্রচ্ছদ পরিবর্তন হয়েছে দেখেছি। পূর্ণেন্দু পত্রীর প্রচ্ছদ হয়তো আর যুগোপযোগী মনে হচ্ছে না প্রকাশক কোম্পানির। জীবনানন্দ দাশের ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’ নাম যেমন প্রকাশক কোম্পানির পছন্দ হয় নাই, ‘রূপসী বাংলা’ নাম দিয়ে ‘উরা’ সমূহ সর্বনাশ করেছেন বইটার, পাঠ রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছেন। ‘একা এবং কয়েকজন’ আবার পুরনো প্রচ্ছদেও দেখছি বইয়ের দোকানে। পাইরেট এডিশন? তাও পূর্ণেন্দু পত্রীর সেই প্রচ্ছদটা তো আছে। বনেদী প্রকাশকদের কায়কারবার, ‘একা এবং কয়েকজন’ বইয়ের প্রকাশক কোম্পানি ‘দুইশো বছরের বাংলা মুদ্রণের ইতিহাস’ ছেপেছেন। থানইট সেই বইতে ‘দুইশো বছরের বাংলা অলংকরণের ইতিহাস’ অধ্যায় আছে। পূর্ণেন্দু পত্রীর নাম কোনখানে নাই। কী হয়েছিল? বনেদী সুশীল প্রতিষ্ঠান প্রচ্ছদশিল্পী পূর্ণেন্দু পত্রীকে গ্রহণযোগ্য মনে করে নাই। কেন? পূর্ণেন্দু পত্রী প্রতিষ্ঠানের শত্রু হয়ে উঠেছিলেন? তাতে যে কাজটা তারা করল, ইতরামি করল। পূর্ণেন্দু পত্রীর কিছু ক্ষতি কি হয়েছে? নাকি বাংলা বইয়ের ‘প্রচ্ছদের গড’ পদ থেকে পূর্ণেন্দু পত্রী খারিজ হয়ে গেছেন? ‘হায়রে!’ বলি। আমাদের দেশেও আছে এরকম। এইসবের অবসান হওয়ার উপায় নাই বলে এইসব খুবই বিরক্তিকর এবং বিবমিষামূলক। ভাবি জীবনানন্দ দাশ যদি এযুগে জন্মাতেন, বরিশালে থাকতেন, চাকরি করতেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে, বনেদী সুশীল প্রকাশক, বনেদী সুশীল প্রতিষ্ঠান, ‘দন্তরাজী কৌমুদী’র চলমান বিজ্ঞাপন বনেদী সুশীল লেখককূলের দাপটে যে কী দুর্দশা হতো মানুষটার?
 

জীবনানন্দ দাশের কথা যখন উঠল আরেকটু বলি। ‘বনলতা সেন’ বইয়ের প্রচ্ছদ জীবনানন্দ দাশের পছন্দ হয় নাই। বোনকে বলেছিলেন, ‘আমি কি মিসেস কউরকে দেখে বনলতা সেন রচনা করেছি?’
 

 

মিসেস কউর ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তখন। গুগলে ইন্ডিয়ান হেলথ মিনিস্টার মিসেস কউর লিখে সার্চ দিলে ইমেজ দেখা যায়। আগ্রহীরা মিলিয়ে দেখে ম্রিয়মান জীবনানন্দ দাশের ‘উইট’ উপভোগ করতে পারেন।
 

জীবনানন্দ দাশ পছন্দ করেন নাই, হতেই পারে, প্রচ্ছদ হিসাবে ‘বনলতা সেন’-এর কৌলিন্য কিন্তু তাতে কমে না। অবিকল্প সেই ধারণা এখনও। ‘বনলতা সেন’ আপনি আর কীভাবে আঁকবেন, যদি আপনি একজন প্রচ্ছদ শিল্পী হয়ে থাকেন। সম্ভব না সেটা। সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম সেরা প্রচ্ছদ ‘বনলতা সেন’। আধুনিক বাংলা কবিতার বইয়ের অন্যতম সেরা প্রচ্ছদ।
 

সত্যজিৎ রায় কিন্তু দুইটা ‘নাই’ বইয়ের প্রচ্ছদ করেছিলেন। ফেলুদা সিরিজের লালমোহন গাঙ্গুলী, বিখ্যাত রহস্য রোমাঞ্চ লেখক জটায়ুর লেখা, সেই দুইটা বই হলো, ‘করাল কুম্ভীর’ ও ‘হন্ডুরাসে হাহাকার।’ সিনেমার প্রয়োজনে ডিজাইন করে ছাপিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
 

আমাদের দেশে জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন। কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবী, আবুল বারক আলভী প্রচ্ছদ করেছেন। এস.এম. সুলতান একটা বইয়ের প্রচ্ছদ করেছিলেন। কাইয়ুম চৌধুরী শুধু প্রচ্ছদ এঁকে কিংবদন্তী হয়ে আছেন। কাইয়ুম চৌধুরীদের কিছু পরে কাজী হাসান হাবিব, খালিদ আহসান, আফজাল হোসেন, সমর মজুমদার, সুখেন দাস, মঈন আহমেদ, মাসুক হেলাল বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন। এদের মধ্যে মাসুক হেলাল এখনও সক্রিয়। প্রচ্ছদ বানানোর গল্প তারা কেউই লিখেন নাই। নিজের থেকে তাগিদ পান না বা কেউ লিখতে বলে না হয়তো। বা এসব কী লেখার মতো ব্যাপার?
 

 

না কেন? লেখার মতো ব্যাপার না কোনটা?
 

তারা বুঝেছে। তাদের প্রতিষ্ঠান আছে, পত্রিকা আছে, প্রকাশনা আছে। ‘আমরা ভালো’ মার্কা ঢক্কানিনাদ আছে। তারা দেখলাম একদিন বিরাট প্রতিবেদন করেছে তাদের পত্রিকায়, ‘বাংলাদেশের প্রচ্ছদে মায়া নাই।’ ওরে সর্বনাশ! তারা দেশ নিয়ে চিন্তা করে, দশ নিয়ে চিন্তা করে, বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়েও চিন্তা করে দেখি! বইমেলার সিজনে না, শীতকালে না, ভরগরম জুন বা জুলাইতে সেই ‘মায়াময়’ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদ ও মায়া, আতকা এই উলম্ফন কেন? স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। কেন তারা এটা করেছে? সুশীল বনেদিআনা যে কতটা নির্মম ও কৌতুককর হয়ে উঠতে পারে। বইয়ের প্রচ্ছদ অল্প কজন মানুষ করেন এদেশের। অল্পকজনের মধ্যেও কমজনের রুটি রোজগারের এটা একমাত্র উপায়। তাদের পেটে লাথি মেরে দিতে হলো?
 

বইয়ের প্রচ্ছদের মায়া কোন খানে থাকে? বাংলাদেশের কোন কোন বইয়ের প্রচ্ছদে মায়া আছে? পৃথিবীর কোন কোন বইয়ের প্রচ্ছদে মায়া আছে?
 

বাংলাদেশের সব বইয়ের প্রচ্ছদে আছে, পৃথিবীর সব বইয়ের প্রচ্ছদে আছে। মায়া। কিন্তু সেই মায়া ধরা যায় না। বিগত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে আমি প্রচ্ছদ বানিয়ে দুইটা খেয়ে পরে বাঁচি, প্রচ্ছদের মায়া ধরতে পারি নাই। আইনস্টাইনই জগতের মায়া ধরতে পারেন নাই।
 

তবুও মায়া। ডিজাইন মাত্রই। কেন? সিগারেটের প্যাকেটের ডিজাইন, কনডমের প্যাকেটের ডিজাইনে মায়া নাই?
 

 

বানানো হয় নাই এমন একটা প্রচ্ছদের কথা এখন বানাই। সত্যজিৎ রায়ের ‘বনলতা সেন’ জীবনানন্দ দাশের পছন্দ হয় নাই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি ‘বনলতা সেন’-এর প্রচ্ছদ করতেন? জীবনানন্দ দাশের এই কাতরতা ছিল যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতা পড়বেন এবং সে বিষয়ে দুই একটা কথা বলবেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তবে জীবনানন্দ দাশের কবিতা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য একেবারেই অযাচিত অপমানজনক। ‘চিত্ররূপময়’ বলে সিল মেরে দিলেন। ভর্ৎসনার মধ্যেও অবশ্য মোক্ষম কথাটা বলে দিয়েছেন। সেটা হলো জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ‘তাকিয়ে দেখার আনন্দ আছে।’ কোন কবিতা তাকিয়ে দেখা যায়? যে কবিতার প্রতিটা অক্ষর, দাড়ি কমা সেমিকোলন সমেত, পংক্তি বিন্যাস থেকে, স্পেস থেকে, ‘তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়।’ মোক্ষম কথা তবে ত্রস্ত নীলিমার কবি জীবনানন্দ দাশকে কবিগুরু চিনতে পারেন নাই। বরং প্রবীণ চিত্রকর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাত্ম হতে পেরেছিলেন তরুণতর কবিপ্রবরের সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পেইন্টিং দেখে এখন বারবার আমার ভেতরে এই বোধ জন্ম লয়। জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন, অদ্ভুত আঁধার এক, বাংলার ত্রস্ত নীলিমা, সরোজিনী, সুরঞ্জনা, সুলোচনা, অরুনিমা স্যানাল, নগরীর মহৎ রাত্রি, আট বছর আগের একদিন—সব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এঁকে রেখে গেছেন। মায়াগত ভাবে। জীবনানন্দ দাশের কবিতার জগৎ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পেইন্টিংয়ের জগৎ এতোটাই এক। 

ক্যামনে কী?
 

‘বনলতা সেন : জীবনানন্দ দাশ। প্রচ্ছদ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’, তবে বানানো যেতেই পারে।
 

রমাপদ চৌধুরীর ‘বীজ’ বইটা আমি কিনেছিলাম শুধু প্রচ্ছদ দেখে। প্রচ্ছদ : সুব্রত চৌধুরী। এখন বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদ যারা করেন সুব্রত চৌধুরী আমার মোস্ট ফেভারিট। এই সুব্রত চৌধুরী ‘মায়া’ আঁকতে পারেন। আবার সেই মায়া! সুব্রত চৌধুরী এই অধমের একটা বইয়ের প্রচ্ছদ করে দিয়েছেন—‘বাম হাতে ছয় আঙুল।’ ক্রমে আরও আ সি তে ছে। আমি একটা বই লিখেছি ‘আকা’। সুব্রত চৌধুরী সেই বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করে দেবেন। আমার উপন্যাস ‘সুবিনয় মুস্তফীর জগতের’ প্রচ্ছদ করে দেবেন। আর যদি বেঁচে থাকি, সময় পাই, আমি একটা কিশোর উপন্যাস লিখব জীবনানন্দ দাশের ছেলেবেলা নিয়ে, যে জীবনানন্দ দাশ কোনদিনই ধানসিদ্ধি নদী দেখেন নাই, অথচ লিখে সেই নদীর নাম এফিডেভিট করে ‘ধানসিড়ি’ করে দিয়ে গেছেন। আমার উপন্যাসের নাম হবে ‘আবার আসিব ফিরে।’ প্রচ্ছদ সুব্রত চৌধুরী করবেন। আর চাই কী!
আমার বই ‘দূরের সবুজ বনভূমি।’ প্রচ্ছদ : সব্যসাচী হাজরা। সেরা প্রচ্ছদ।
 

আমার বই, ‘আনকাইন্ড’। পিশাচ কাহিনী। প্রচ্ছদ : রজত। কী করেছে, যারা প্রচ্ছদে মায়া ফায়া খুঁজেন তারা একটু দেখবেন? শুধু আমি একা দেখতে পাবো, এরকম একটা বিলবোর্ড যদি এই প্রচ্ছদটা দিয়ে বানাতে পারতাম!
 

প্রচ্ছদ নিয়ে কথার বাক্স খুলে বসেছি, আমি কে?
 

 

কিংবদন্তী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আমি একটা স্মৃতিচারণামূলক বই লিখছি। সেই বইয়ের পাণ্ডুলিপি থেকে উল্লেখ করি :
হুমায়ূন আহমেদের এক উপগ্রহ, নাট্যাভিনেতা, বিরাট গাঞ্জুট্টি, আমার দ্যাশের পেটের ভাই, বিপদে পড়ে একবার আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল। জানুয়ারি মাসে ফেরত দিয়ে দেবে। এক জোনাকী দুই জোনাকী তিন জোনাকী গানের মতো এক জানুয়ারি, দুই জানুয়ারি, তিন জানুয়ারি চলে গেল, দ্যাশের পেটের ভাই আমার টাকা আর দেয় না। আমি কল দিলে ধরে না। মেসেজ দিলাম : ভাইরে আমার তো টাকাটা দরকার।
 

একক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে।
এতদিনে ৮ ঘণ্টা ২৪ মিনিট পর আমার দ্যাশের পেটের ভাই আমার মেসেজের রিপ্লাই দিল : হু আর ইউ?
আমি হলাম সেই ‘হু আর ইউ।’
তবে, তরে আমি মাফ করে দিসিরে ভাই। কসম।
অবশ্যই আমি ‘হু আর ইউ।’
আইডেনটিটি ক্রাইসিস আমার আর নাই।
বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদ করে ভাত খাই।
কিছু বাংলা বইয়ে মুদ্রিত থাকে প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ। যারা বইয়ের প্রিন্টার্স লাইনও পড়েন, তারা ‘প্রচ্ছদ : হু আর ইউ’ পড়ে নিতে পারেন সানন্দে। একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। আমার খুব প্রিয় একজন অভিনেতা আছেন, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। কয়েক মাস তাঁর একটা ওটিটি সিরিজের ট্রেলার না টিজার কী বলে, ইউটিউবে দেখলাম—শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় আসছেন ধ্রুব এষ হয়ে।
 

এ কোন ধ্রুব এষ?
আমি তবে কে?
ঠিকই তো আছি।
হু আর ইউ। আমি প্রচ্ছদ : হু আর ইউ।
মায়া ফায়া নাই
প্রচ্ছদ বানাই
দুইটা ভাত খাই।
 

আমার বানানো কিছু বইয়ের প্রচ্ছদের গল্প আমি নানা সময় লিখেছি। আরও কিছু লিখব। বই করব। বারো তেরোটা বইয়ের প্রচ্ছদের গল্প। সব বইই হুমায়ূন আহমেদের। বাংলা ভাষার এই কিংবদন্তী লেখকের সর্বাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ আমি করেছি। প্রথম সংস্করণ, পুনর্মুদ্রণ, সংকলন ইত্যাদি মিলিয়ে তিনশ’র বেশি বইয়ের প্রচ্ছদ। ‘এবং হিমু...’ বইয়ের প্রচ্ছদের গল্পটা এখানে সংক্ষেপে বলি। হুমায়ূন আহমেদ আমাকে এই প্রচ্ছদটা বানাতে বলেন নাই। নিজের থেকে আমি একটা ‘হিমু প্রচ্ছদ’ বানিয়েছিলাম। হুমায়ূন আহমেদকে দেখাতে পছন্দ করলেন এবং বইয়ের নাম ঠিক করে দিলেন ‘এবং হিমু...।’ গল্প পরে লিখেছিলেন। সারাজীবনের অয়েলে মাত্র দুইটা বইয়ের প্রচ্ছদ আমি করেছি। তার একটা হলো ‘এবং হিমু...।’
এবং হিমু।
এবং হু আর ইউ।
 

আমি কী ভাবি যখন কোনও বিশেষ বই বা অবিশেষ বইয়ের প্রচ্ছদ বানাই? কিছু ভাবি না। তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়। পৃথিবীর কিমাকার ডাইনামোর ’পরে। আর মহীনের ঘোড়াগুলি গান গায় :
পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে
স্যাটেলাইট আর ক্যাবলের হাতে
ড্রয়িং রুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দী
আহা হা হা, আ হা...।
এই হলো সার্বিক পরিস্থিতি।

সব খবর