সর্বশেষ

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা না থাকলে বাংলাদেশে না আসার ঘোষণা

ঢাকায় এসে কষ্ট নিয়ে ফিরে গেলেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর প্রপৌত্র সিরাজ আলী খান

বিনোদন ডেস্ক বিডি ভয়েস
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:২৯
ঢাকায় এসে কষ্ট নিয়ে ফিরে গেলেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর প্রপৌত্র সিরাজ আলী খান

শিল্পী, সংগীত ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে আর ফিরবেন না এমন ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বখ্যাত সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর প্রপৌত্র সিরাজ আলী খান। ঢাকায় অবস্থানকালে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে হামলার ঘটনার পর গভীর বেদনা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাটি শুধু একটি সংগঠন বা সংগীতযন্ত্রে ভাঙচুর নয়; এটি সংস্কৃতি, শিল্পী এবং যৌথ ঐতিহ্যের ওপর সরাসরি আঘাত।

 

রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সিরাজ আলী খান লেখেন, “ভারী হৃদয়ে আমাকে স্পষ্ট করে বলতে হচ্ছে—শিল্পী, সংগীত এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ ও সম্মানিত না হওয়া পর্যন্ত আমি বাংলাদেশে আর ফিরব না।” তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত রাগ থেকে নয়, বরং দায়িত্ববোধ থেকে—নিজের নিরাপত্তা, শিল্পচর্চা এবং পারিবারিক সংগীত-উত্তরাধিকার রক্ষার দায় থেকেই এই অবস্থান।

 

সিরাজ আলী খান উল্লেখ করেন, তিনি এখনো বিশ্বাস করেন সংগীতের শক্তি মানুষের মধ্যে আরোগ্য ও ঐক্য গড়ে তুলতে পারে। তবে ভয় ও সহিংসতার পরিবেশে সেই সেতু ভেঙে পড়লে সমাজ আরও গভীর ক্ষতির মুখে পড়ে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, একদিন শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান আবার ফিরে আসবে এবং সেই সেতু পুনর্নির্মাণ সম্ভব হবে।

 

উল্লেখ্য, শুক্রবার ঢাকার ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে একটি সংগীতানুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা ছিল সিরাজ আলী খানের। কিন্তু তার আগের দিন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ছায়ানট প্রাঙ্গণে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি অনুষ্ঠান বাতিল করেন এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন।

 

বিশ্বখ্যাত মাইহার ঘরানার এই শিল্পী ভারতপ্রবাসী। তিনি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর পুত্র আলী আকবর খাঁর পরিবারের উত্তরসূরি এবং ধ্যানেশ খাঁর সন্তান। সিরাজ আলী খান জানান, তিনি ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছিলেন, নিজের শিকড়ের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে।

 

তিনি বলেন, “আমি সবসময় বিনয় ও শ্রদ্ধা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি—আমার পরিবারের সংগীত ঐতিহ্য ও মাইহার ঘরানার উত্তরাধিকার ভাগ করে নিতে। কিন্তু জীবনে প্রথমবার আমাদের নিজের জীবনের জন্য ভয় পেয়েছি। আগে কখনো ভাবিনি, বাংলাদেশে একজন ভারতীয় শিল্পী হিসেবে নিজের পরিচয় দেওয়াই আমাকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।”

 

১৯ ডিসেম্বরের ঘটনাকে ‘যৌথ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ধ্বংসের চেষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করে সিরাজ আলী খান বলেন, সংগীত সবসময়ই ভারত ও বাংলাদেশের ইতিহাস ও মানুষের মধ্যে একটি সেতু ছিল। সেই সেতু যখন সহিংসতায় ভেঙে যায়, তখন কেবল শিল্পই নয়—মানবিক মূল্যবোধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

বাংলাদেশকে ‘পিতৃভূমি’ আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, তার সমালোচনা কোনো প্রত্যাখ্যান নয়, বরং গভীর উদ্বেগের প্রকাশ। তিনি এখনো আশাবাদী, প্রজ্ঞা, সংলাপ ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মানই শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে—যেমনটি এই ভূখণ্ডের ইতিহাসে বহুবার হয়েছে।

সব খবর