অমর একুশে বইমেলা ২০২৬ আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা ও বিলম্বের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস) জানিয়েছে মেলাটি ডিসেম্বরেই আয়োজন করা উচিত। তারা বলেছে, নির্বাচনের পর মেলা আয়োজন “বাস্তবতার সাংঘর্ষিক” হবে।
রোববার বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বইমেলা অনিশ্চয়তার সময়ে: লেখক–পাঠক–প্রকাশক মতবিনিময় সভা’ শীর্ষক আলোচনায় প্রকাশক, লেখক ও পাঠকেরা বইমেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও মতামত তুলে ধরেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাপুসের বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি আবু বাশার ফিরোজ শেখ।
তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন, এরপর রোজা ও ঈদুল ফিতর। এই সময়সীমায় এপ্রিলের আগে মেলা আয়োজন কার্যত অসম্ভব। অন্যদিকে এপ্রিলের প্রচণ্ড গরম ও ঝড়–বৃষ্টির সময় বিশাল মেলা কাঠামো নিরাপদে তৈরি ও পরিচালনাও বাস্তবসম্মত নয়।”
প্রকাশকদের মতে, বইমেলা কেবল একটি বাণিজ্যিক আয়োজন নয়, এটি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। মেলা ব্যাহত হলে তা জাতির সাংস্কৃতিক পরাজয়ের শামিল হবে।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তিনটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এর একটি হলো, ২০২৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারির মধ্যে বইমেলা আয়োজন করা। সমিতি বলেছে, সরকার ও বাংলা একাডেমিকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে প্রকাশনা শিল্প, লেখক ও পাঠক সবাই প্রস্তুতি নিতে পারেন।
এ ছাড়া সময়মতো মেলা আয়োজনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের আহ্বানও জানানো হয়েছে।
সভা শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “অমর একুশে বইমেলা কোনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক বিলম্বের বিষয় নয়; এটি জাতির মননের উৎসব। আমরা সরকারের প্রতি বিনীত আহ্বান জানাই বইমেলা যেন সময়মতো, নিরাপদে ও যথাযথ মর্যাদায় হয়।”
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাপুসের সহসভাপতি গোলাম এলাহী জায়েদ, প্রকাশক মনিরুজ্জামান খান, লেখক শিবলী আজাদ ও পুলীন বকসী। আলোচনায় অংশ নেন প্রকাশক ইফতেখার আমিন ও আবু বকর সিদ্দিক রাজু।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলা একাডেমি এ বছর বইমেলা ডিসেম্বরেই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পর ২৮ সেপ্টেম্বর আয়োজক প্রতিষ্ঠানটি সেই তারিখ “স্থগিত” ঘোষণা করে। এখন পর্যন্ত নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।