চলতি বছরে অবৈধ পথে লিবিয়া হয়ে অন্তত ১৮ হাজার বাংলাদেশি ইতালিতে প্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো। তিনি জানান, বৈধ অভিবাসনের পথ না বেছে অনেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের অজুহাতে ইতালিতে ঢুকছেন, যা দুই দেশের জন্যই সমস্যার সৃষ্টি করছে। তাই ইতালি এখন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও জোরদার করবে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘সম্পর্ক জোরদার: বাংলাদেশ–ইতালির ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক কান্ট্রি লেকচার সিরিজে বক্তব্য রাখেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “অনেক বাংলাদেশি বৈধ পথে অভিবাসন করছেন না, যা আমাদের সম্পর্কের জন্যও ভালো নয়। আগে আমরা সীমিত সংখ্যক অবৈধ অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠাতাম, এখন সেই সংখ্যা বাড়াতে যাচ্ছি।” তিনি জানান, এ বছর এখন পর্যন্ত ৯ হাজার বাংলাদেশিকে বৈধ ভিসা দিয়েছে ইতালি। যার মধ্যে ৫৩০ জন শিক্ষার্থী।
রাষ্ট্রদূত আলেসান্দ্রো জানান, ইতালি বিশ্বাস করে অভিবাসন অবশ্যই বৈধ ও স্বচ্ছ উপায়ে হওয়া উচিত। অবৈধভাবে ঢুকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলে তা শুধু ব্যক্তিরই ক্ষতি করে না, বরং বাংলাদেশের পাসপোর্ট ও সরকারি নথির আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। “অনেক আবেদনকারী কোনো নিপীড়নের শিকার না হয়েও আশ্রয়ের চেষ্টা করেন। এমনকি ভুয়া সরকারি কাগজের নমুনাও আমাদের সামনে আসে,” বলেন তিনি।
তার মতে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যারা দালালকে ৫০ হাজার ইউরো দিয়ে লিবিয়া হয়ে ইউরোপ প্রবেশ করেন তারা ‘ভুক্তভোগী’ নন, বরং ঝুঁকি জেনেই এ পথে নামছেন। “এ ধরনের প্রবণতা বাংলাদেশিদের আন্তর্জাতিক ইমেজেও ক্ষতি করে।”
ইতালির ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশের অটোমোবাইল, টেক্সটাইল, এবং শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানিতে ইতালির আগ্রহ বাড়ছে। ছোট ও মাঝারি শিল্পের ইতালিয়ান উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে, কিন্তু উচ্চ শুল্কহার বিনিয়োগে বড় বাধা, “আমি মনে করি বিনিয়োগের শুল্কহার কমানো উচিত,” বলেন তিনি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ইতালির রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করে বলেন: “আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরবে। তখন কেউ আশ্রয় নিতে বিদেশে পালাতে বাধ্য হবে না। আমাদের চাওয়া বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সাফল্য।”
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়েও তিনি মন্তব্য করেন, “ইতালি কাউকে রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে অস্ত্র বিক্রি করে না। বাংলাদেশ যদি প্রয়োজন বোধ করে, তবে সহযোগিতা দেওয়া হবে।”
এ সময় তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপ সফরের ব্যস্ততায় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির এশিয়া সফর পিছিয়ে যায়। “তবে তিনি আসবেন, যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা সফর করবেন, যদিও এ বছর সম্ভব নাও হতে পারে।”
অনুষ্ঠানে বিআইআইএসএস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস, অধ্যাপক ড. সৈয়দা রোজানা রশিদ, মো. মোশাররফ হোসেন ও অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বক্তব্য দেন।