বুনিয়াদি প্রশিক্ষণরত তিনজন সহকারী কমিশনারকে (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) চাকরিচ্যুত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বুধবার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
চাকরিচ্যুতদের মধ্যে রয়েছেন— কাজী আরিফুর রহমান (ফরিদপুর), অনুপ কুমার বিশ্বাস (বগুড়া) এবং নবমিতা সরকার (পিরোজপুর)। তারা বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছিলেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১-এর বিধি ৬(২)(এ) অনুযায়ী তাদের সরকারি চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, চাকরিরত অবস্থায় তাদের কাছে কোনো আর্থিক পাওনা থাকলে তা ‘দ্যা পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট, ১৯১৩’ অনুযায়ী আদায়যোগ্য হবে।
তবে প্রজ্ঞাপনে চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। চাকরিচ্যুত দুই কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাদের কাছে কোনো কারণ জানানো হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বুধবারই তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ প্রশিক্ষণ থেকে বিদায়ের দিনেই চাকরি থেকে বিদায় দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১-এর বিধি ৬(২)(এ) অনুযায়ী বলা হয়েছে, শিক্ষানবীশ মেয়াদ চলাকালে কোনো শিক্ষানবীশীকে চাকরিতে বহাল থাকার অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলে সরকার পিএসসি’র সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই সরাসরি নিয়োগের অবসান ঘটাতে পারে।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ৪৩তম ব্যাচের পুলিশ ক্যাডারের চারজন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। তারা হলেন— শের শাহ্, শোভন কুমার বিশ্বাস, রওশন জামিল ও আশফাক ফেরদৌস। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ব্যাচের নিয়োগের সময় অন্তত ৬৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে চাকরিরত অবস্থায় বিভিন্ন ক্যাডারের আরও ১৩ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
চাকরিচ্যুত তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে দুইজনের সঙ্গে কথা হয়েছে গণমাধ্যমের। তাদের একজন বলেন, “ছাত্রজীবনে হলে থাকার সময় রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে যেতে হয়েছে। এগুলোকে যদি অযোগ্যতা ধরা হয়, তাহলে কী আর বলবো?” তিনি আরও জানান, “আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা, বাবার হার্টে রিং পড়ানো। বুঝতেই পারছেন কী অবস্থায় আছি।”
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও লেখক ফিরোজ মিয়া বলেন, “নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করলেও অতীতে এ ধরনের আদেশ আদালতে টিকেনি। সুনির্দিষ্ট কারণ থাকলে কাউকে চাকরিচ্যুত করা যায়, তাতে বাধা নেই। কিন্তু কারণ উল্লেখ না করে চাকরিচ্যুতি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।” তিনি আরও বলেন, “যারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা সংবিধান অনুযায়ী আদালতের দারস্থ হতে পারেন। আশা করি তারা ন্যায়বিচার পাবেন।”
অসামরিক কর্মচারীর বরখাস্তের বিষয়ে সংবিধানের ১৩৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে তার বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর যুক্তিসঙ্গত সুযোগ না দিয়ে বরখাস্ত, অপসারণ বা পদাবনতি করা যাবে না। ফলে কারণ দর্শানো ছাড়াই চাকরিচ্যুতি নিয়ে আইনি প্রশ্ন উঠতে পারে।