সর্বশেষ

আইএমএফের নতুন অবস্থান

নির্বাচিত সরকার ছাড়া ঋণের অর্থ ছাড় নয়

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:২৮
নির্বাচিত সরকার ছাড়া ঋণের অর্থ ছাড় নয়

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশে ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ে নতুন অবস্থান নিয়েছে। সংস্থাটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচিত সরকার গঠনের আগে তারা এই কিস্তির অর্থ ছাড় করবে না। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে চলমান সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে তাদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি নিয়েই কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত হবে।

 

বাংলাদেশ আইএমএফ-এর কাছ থেকে ষষ্ঠ কিস্তিতে প্রায় ৮০ কোটি ডলার পাওয়ার কথা। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক–আইএমএফ বার্ষিক সভার সাইডলাইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠকে সংস্থাটি এই বার্তা দেয়।

 

বৈঠকে গভর্নর জানান, ডিসেম্বরের মধ্যেই কিস্তি ছাড়ের আশা করছে বাংলাদেশ। কিন্তু আইএমএফ প্রতিনিধিরা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচন শেষে নতুন সরকারের সঙ্গে সংস্কার কর্মসূচির ধারাবাহিকতা নিয়ে আলোচনা করেই অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আইএমএফ যদি কঠোর শর্ত আরোপ করে, বাংলাদেশ তা মেনে নেবে না। দেশের অর্থনীতি এখন স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে; খাদের কিনারা থেকে উঠে এসেছে।”

 

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে আইএমএফ তার প্রভাব বাড়াতে চাচ্ছে। কিস্তি স্থগিত রাখলে তা বর্তমান সরকারের জন্য ইমেজ সংকট তৈরি করবে যা সংস্থাটির জন্য একধরনের কূটনৈতিক চাপের হাতিয়ার হতে পারে। ২০০১ ও ২০২২ সালেও অনুরূপভাবে আইএমএফ কঠোর শর্তের মাধ্যমে তৎকালীন সরকারকে সংস্কার বাস্তবায়নে বাধ্য করেছিল।

 

অতীতে আইএমএফের শর্ত মেনে সরকার জ্বালানি তেল, গ্যাস ও সার–সব খাতে দাম বাড়িয়েছিল, যার প্রভাব এখনো মূল্যস্ফীতিতে অনুভূত হচ্ছে। এবারও আইএমএফ অর্থ ছাড়ের আগে নতুন সরকারের কাছ থেকে একই ধারাবাহিক সংস্কারের নিশ্চয়তা চাইবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবী, আইএমএফের অর্থ ছাড় না হলেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতিতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়বে না। কারণ, রেমিট্যান্স ১৬ শতাংশ বেড়েছে, রপ্তানি আয়েও তিন মাসে গড়ে ৫.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে থাকায় রিজার্ভ বেড়ে ৩,২১৪ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবও এখন উদ্বৃত্তে রয়েছে।

 

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আইএমএফের অর্থ না হলেও সমস্যা নেই, তবে তাদের নীতিগত সহায়তা দরকার। সবসময় ঋণ কর্মসূচির মধ্যে থাকতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই।”

 

২৯ অক্টোবর ঢাকায় আসছে আইএমএফ মিশন, যারা দুই সপ্তাহ অবস্থান করে ঋণ ছাড়ের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। মিশনের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ নির্বাচনের আগে না পরে এই কিস্তির অর্থ পাবে।

সব খবর

আরও পড়ুন