বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ পোশাকশ্রমিক গুরুতর স্বাস্থ্য ও জীবিকা সংকটে পড়েছেন। এ অবস্থায় ফ্যাশন ব্র্যান্ড, সরবরাহকারী এবং সরকারগুলোর প্রতি জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ক্লিন ক্লোথস ক্যাম্পেইন (সিসিসি)।
সংগঠনটির “হিট অ্যান্ড গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স রাইটস: ফ্যাশনিং এ জাস্ট ট্রানজিশন” শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের ওপর। এদের অধিকাংশই নারী, অভিবাসী ও গৃহভিত্তিক কর্মী, যারা ইতিমধ্যে রোগ, হয়রানি ও মজুরি বঞ্চনার মতো সমস্যায় ভুগছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোশাকশিল্প এমনিতেই গরম ও ঘন কাজের পরিবেশে পরিচালিত হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে এই পরিবেশ আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে যেসব দেশ পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল এবং একই সঙ্গে জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক। ‘ক্রিটিকাল ৯’ নামে চিহ্নিত দেশগুলোর মধ্যে ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ব্রাজিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, উগান্ডা ও সার্বিয়ার শ্রমিকরাও উচ্চ তাপমাত্রার নেতিবাচক প্রভাব ভোগ করছেন।
সিসিসি জানিয়েছে, ফ্যাশনশিল্প নিজেই বিপুল পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে পরিবেশের ক্ষতি করছে, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করছে। অথচ এই শিল্পে যারা সবচেয়ে কম মজুরিতে কাজ করেন, তারাই জলবায়ু সংকটের প্রথম ও ভয়াবহ শিকার। অতিরিক্ত তাপ এখন শুধু কর্মপরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি ব্যবস্থাগত হুমকি, যা বিদ্যমান শ্রম অধিকার লঙ্ঘনকে তীব্রতর করছে।
সংগঠনটি বলেছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির দায় শুধু ব্র্যান্ড বা সরবরাহকারীদের নয়, সরকারগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাধ্যতামূলক মানদণ্ড নির্ধারণ, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও আয় রক্ষায় সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সিসিসির আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি জিউসেপ্পে সিওফো বলেন, “সরকারগুলোর উচিত কর্মক্ষেত্রে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, তাপজনিত ঝুঁকি থেকে শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং অসুস্থ হলে ক্ষতি কমানোর ব্যবস্থা করা। ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানে সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় আগাম পরিকল্পনাও জরুরি।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান কমাতে এবং শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় সরকার, ব্র্যান্ড ও সরবরাহকারীদের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। শোষণমূলক ব্যবসায়িক আচরণ বন্ধ করে মর্যাদাপূর্ণ কাজের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তির ধরন বা অভিবাসন অবস্থার পার্থক্য ছাড়াই সব শ্রমিকের জন্য সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগ জরুরি।
সিসিসি সতর্ক করেছে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে পোশাকশ্রমিকরা জলবায়ু বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন, যা তাদের নিরাপত্তা, জীবিকা ও ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।