সিদ্ধান্তহীনতা ও প্রশাসনিক জটিলতায় থমকে গেছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত পাঁচটি মেগাপ্রকল্প। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, যমুনা রেল সেতু, শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, মেট্রো রেল লাইন ১ ও ৫ এবং কাঁচপুর-মেঘনা-গোমতী সেতুর সবকটিই এখন নানা জটিলতায় স্থবির।
সর্বশেষ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বৈঠকে উঠে এসেছে এসব প্রকল্পের অগ্রগতির হতাশাজনক চিত্র। জাইকা বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক করে জানিয়েছে, বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা ও বিলম্ব দূর না হলে ভবিষ্যতে নতুন প্রকল্প অনুমোদনে তারা আরও সতর্ক থাকবে।
কাঁচপুর-মেঘনা-গোমতী সেতু: শেষ হয়েও হয়নি নিষ্পত্তি
প্রায় এক বছর আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও জাপানি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত আট কোটি টাকার দাবি তুলেছে। বিরোধ নিষ্পত্তি বোর্ড দাবি স্বীকার করলেও অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রকল্পের আর্থিক বিশ্লেষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাতারবাড়ী বন্দরের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে, যা প্রশাসনিক সমন্বয়ের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।
বিমানবন্দর সম্প্রসারণ: বিলম্ব ও বিরোধে জর্জরিত
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে ছয় শতাধিক পরিবর্তন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি এখনো অনুমোদিত হয়নি। ঠিকাদার ও বিমান কর্তৃপক্ষের দাবি-পাল্টাদাবিতে বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকায়। নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে, সময়সূচি ভেঙে পড়েছে, এবং পুরো কাজ শেষ হতে দেড় বছর সময় লাগবে বলে ধারণা।
যমুনা রেল সেতু: অগ্রগতি টানাপোড়েনে
দেশের রেল যোগাযোগে যুগান্তকারী এই প্রকল্পেও রয়েছে দাবি ও অনুমোদন বিলম্ব। দুটি প্যাকেজে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি, সংশোধিত প্রস্তাব এখনো পরিকল্পনা কমিশনে জমা পড়েনি। জাইকা জানিয়েছে, সময় বাড়ানো ও বিলম্বে তারা হতাশ।
মেট্রো রেল লাইন ১ ও ৫: স্থবির স্বপ্ন
রাজধানীর যানজট নিরসনে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে দরপত্র অনুমোদন ও ইউটিলিটি স্থানান্তরের বিলম্বে কাজ থেমে আছে। লাইন ৫-এর একটি প্যাকেজে প্রস্তাব প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি হওয়ায় সংশোধিত প্রস্তাব জরুরি। জাইকা বলছে, প্রকল্প পরিচালক ও তাদের কার্যালয়ের মধ্যে যোগাযোগ ঘাটতি ও জবাবদিহির অভাব প্রকল্প স্থবিরতার মূল কারণ।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র: প্রযুক্তিগত ব্যর্থতায় বিপর্যয়
৩৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে বয়লারে ছাই জমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে গেছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যন্ত্রের নকশায় ত্রুটি দাবি করলেও পরামর্শক সংস্থা তা অস্বীকার করছে। অতিরিক্ত সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার দাবি উঠেছে। সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ডলার।
জাইকা বলছে, সরকারি সংস্থাগুলো সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, ফলে খরচ বাড়ছে, আস্থা কমছে। অন্যদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, জাইকার নিজস্ব প্রক্রিয়া ধীরগতির ও জটিল, প্রতিটি সিদ্ধান্তে টোকিওর অনুমোদন নিতে হয়। বিদেশি শর্ত ও অনুমোদন বিলম্বে প্রকল্প থেমে যাচ্ছে, আর জনগণের প্রত্যাশা অপূর্ণ থাকছে।