সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে মব আক্রমণ হলে পুলিশ তাদের আটক করে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, আটককৃতদের বক্তৃতা, বিবৃতি, ব্যানার, বই ও কলামের লেখা বিশ্লেষণ করে সন্ত্রাসবাদের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তার ভাষায়, “তাদের বক্তব্য ও লেখনী রাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করছে।”
গোলটেবিল বৈঠকে ‘মব’
‘আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি সংগঠন। প্রধান অতিথি হিসেবে গণফোরামের সাবেক সভাপতি ড. কামাল হোসেনের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি অনুষ্ঠানে আসেননি। তার আগেই বৈঠকস্থলে একদল তরুণ প্রবেশ করে স্লোগান দিতে থাকে। এসময় লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজন অংশগ্রহণকারীকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন, ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, সাংবাদিক মনজুরুল ইসলাম পান্না ও সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানও ছিলেন। হট্টগোলের মধ্যে তাদেরকেও পুলিশ হেফাজতে নেয়।
একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে দেখা যায়, কিছু তরুণ স্লোগান দিচ্ছে—“একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর।” এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
ডিআরইউর নিন্দা
ঘটনার পর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এক বিবৃতিতে এ হামলার নিন্দা জানায়। ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, “ডিআরইউ উন্মুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে সবার মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। বহিরাগতদের অনাকাঙ্ক্ষিত হামলা গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী।”
তারা আরও জানান, গোলটেবিল বৈঠক চলাকালে বহিরাগতরা ‘মব’ তৈরি করে অংশগ্রহণকারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এসময় ডিআরইউর কয়েকজন সদস্য নাজেহাল হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা
ডিবি সূত্রে জানা যায়, শাহবাগ থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে তাদের কেউ শাহবাগ থানায় এবং কেউ মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে রয়েছেন।
শফিকুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত চলবে এবং তাদের বক্তব্য, লেখনী ও কার্যক্রমের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গুজব ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তবে কালিহাতী থানার ওসি জাকির হোসেন এটিকে গুজব বলে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “বাস্তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বাড়িতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সচিব ফরিদ আহমেদও ভিডিওটিকে গুজব বলে মন্তব্য করেন।
সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে কেন্দ্র করে এই গ্রেপ্তার দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক মতবিরোধের জায়গায় আইনের কঠোর প্রয়োগে নতুন বিতর্ক তৈরি হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত শেষে আদালতে কী প্রমাণ হাজির করা হয়।