দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, ঋণের জটিলতা, শ্রমিক অসন্তোষ ও বৈদেশিক ক্রেতার কার্যাদেশ সংকটের কারণে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন লাখো শ্রমিক।
বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৮২টি কারখানা বন্ধ হয়েছে, চাকরি হারিয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৭৫ জন। একই সময়ে ১৬৫টি নতুন কারখানা চালু হয়েছে, যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৬৬ জনের। ফলে এক বছরে ১১ হাজার ৪০৯ জন শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন।
শিল্প পুলিশের তথ্য আরও উদ্বেগজনক। তাদের হিসাবে, গত এক বছরে ২৫৮টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে, যেখানে কর্মরত ছিলেন ১ লাখ ৪ হাজার শ্রমিক। এর মধ্যে ৫৭টি কারখানা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে বন্ধ হয়েছে, যেগুলোর মালিক ছিলেন আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ী।
কারখানা বন্ধের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে—২০২৪ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তন, মালিকদের বিদেশে অবস্থান, ব্যাংকঋণের জটিলতা, এলসি সংকট, কার্যাদেশ না পাওয়া এবং শ্রমিক অসন্তোষ। এসব কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে সংকটের মধ্যেও নতুন কারখানা চালুর প্রবণতা আশাব্যঞ্জক। শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ২৬৫টি নতুন কারখানা চালু হয়েছে, কর্মসংস্থান হয়েছে ৬২ হাজার শ্রমিকের। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডাইফি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও ময়মনসিংহে এক বছরে ৯৩৭টি নতুন কারখানা চালু হয়েছে, যদিও একই সময়ে ২৪৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে।
শ্রমিক অসন্তোষও বাড়ছে। গত এক বছরে ১৩০টি কারখানায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, এখনো ৩৪টি কারখানায় অস্থিরতা চলছে। মজুরি, বকেয়া, কর্মপরিবেশ ও রাজনৈতিক প্রভাব এই অসন্তোষকে তীব্র করছে।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “৪০ বছর ধরে চলা খাত এখনো অস্থির। অতিরিক্ত রাজনৈতিকীকরণ, দুর্নীতি ও টাকাপাচার খাতটিকে ধ্বংস করছে। শ্রমিকরা তিন মাস পর্যন্ত মজুরি পান না—এটি অমানবিক। সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ।”
তিনি শ্রমিকদের জন্য আপৎকালীন তহবিল গঠনের দাবি জানান এবং শিল্পকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার আহ্বান জানান।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মাশরুর রিয়াজ বলেন, “পোশাক খাতে স্থায়ী অস্থিরতা চলছে। দুই শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন। অথচ বৈশ্বিক বাজারে রপ্তানির চাহিদা বাড়ছে, যা বাংলাদেশের জন্য সুযোগ। এখন রপ্তানি ব্যাহত হলে দেশের মাইক্রো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে জরুরি সংলাপ করে রাজনৈতিক কারণে বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোকে নীতির আওতায় এনে কর্মহীন শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।