শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনের অবসানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে প্রভাব বিস্তার করছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ইসলামপন্থী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে সংগঠনটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইস্যুতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
ধর্মীয় ইস্যুতে বিক্ষোভ ও দাবি
২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে হেফাজত চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ করে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON)-এর বিরুদ্ধে, সংগঠনটিকে ‘হিন্দুত্ববাদী উগ্রপন্থী’ ও ‘ভারতীয় এজেন্ট’ বলে দাবি করে। একই মাসে সরকার ঘোষণা দেয়, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে নিহতদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে এবং নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
সংগঠনের অবস্থান ও রাজনৈতিক যোগাযোগ
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক দাবি করেন, সংগঠনটি অরাজনৈতিক হলেও তারা রাজনৈতিক সংস্কারের পক্ষে। সংগঠনটি নারী অধিকার, সংগীত শিক্ষা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষকের পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে।
হেফাজতের প্রধান শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, “কুফরি প্রতিরোধ করতে হলে সঠিক পথ অনুসরণ করতে হবে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে হেফাজত বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (NCP) সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা আওয়ামী লীগকে “অপরাধী সংগঠন” হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে। বিএনপি হেফাজতের সমর্থন চাইলেও ২০১৩ সালের ঘটনায় পাশে না দাঁড়ানোয় সমালোচিত হয়েছে।
সংখ্যালঘু ও সুফি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান
হেফাজত পয়লা বৈশাখ, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও লালন উৎসবকে “হিন্দু ও পৌত্তলিক সংস্কৃতি” বলে আখ্যায়িত করে। তারা সুফি দরগায় সংগীতানুষ্ঠান ও ভক্তদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। আগস্টে ৪০টির বেশি সুফি দরগায় হামলার অভিযোগ ওঠে, যার পেছনে হেফাজতের উসকানি ছিল বলে দাবি করা হয়।
আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অবস্থান
হেফাজত জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে, এটিকে দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখায়। তারা প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এবং ভারতের প্রভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
শেখ হাসিনার পতনের পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী ধর্মীয় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের দাবি, বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক যোগাযোগ দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক সহনশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। আগামী নির্বাচনে এই সংগঠনের ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
লেখকঃ শিবাঙ্গী শর্মা