সর্বশেষ

বুলি সর্বস্ব প্রতিশ্রুতি

উপদেষ্টাদের সম্পদ গোপন রেখে স্বচ্ছতার মুখোশে ইউনূস সরকার

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৪৭
উপদেষ্টাদের সম্পদ গোপন রেখে স্বচ্ছতার মুখোশে ইউনূস সরকার

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদের বিবরণী যেটার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নিজে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এতে করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপনের অঙ্গীকার সরকার করেছিল, সেটি এখন প্রশ্নের মুখে।

 

২০২৪ সালের ১ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রকাশিত নীতিমালায় বলা হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার পর ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করবেন। সেই সঙ্গে তাঁদের স্ত্রী বা স্বামীদের পৃথক আয় থাকলে সেটিও জমা দিতে হবে। নীতিমালায় আরও উল্লেখ ছিল, প্রধান উপদেষ্টা নিজ বিবেচনায় এই তথ্য ‘উপযুক্ত পদ্ধতিতে’ প্রকাশ করবেন।

 

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এক বছরেরও বেশি সময় পরও সেই প্রতিশ্রুত তথ্য জনগণের সামনে আসেনি। অথচ ক্ষমতা গ্রহণের পর ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, “আমাদের সকল উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন।”

 

এই অঙ্গীকার পূরণ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “এটি যেন গতানুগতিক ধারার পুনরাবৃত্তি। পূর্বতনরাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মন্ত্রিসভার সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করবেন, কিন্তু তা হয়নি। ইউনূস সরকার সেই একই পথে হাঁটছে।”

 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, “যদি কিছু লুকানোর না থাকে, তবে কেন তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না? এটা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করছে।”

 

অন্যদিকে, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “যে সরকার পরিবর্তন ও নৈতিকতার কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে, সেই সরকার যদি নিজের ঘর পরিষ্কার না করে, তাহলে জনগণের কাছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না।”

 

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আশা করেছিলেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। কিন্তু উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পরও যদি সম্পদ বিবরণী গোপন রাখা হয়, তবে তা সরকারের নৈতিক অবস্থানকেই দুর্বল করে দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের মত।

 

বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণ জানতে চায় অধ্যাপক ইউনূসের সরকার কি সত্যিই পরিবর্তনের প্রতীক, নাকি বুলি সর্বস্ব অস্বচ্ছতার ধারাবাহিকতা মাত্র?

সব খবর