দীর্ঘ ১৭ বছরের আইনি জটিলতার পর ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাদ পড়া ১,১৩৭ জন প্রার্থীর পক্ষে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই ঐতিহাসিক রায় প্রশাসনে নতুন ধরণের বিশৃঙ্খলা, সিনিয়রিটি সংকট ও সাংগঠনিক ভারসাম্যের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ তিনটি আপিল আবেদনের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করে। রায় অনুযায়ী, ২০০৭ সালের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পরবর্তীতে বাতিল হওয়া প্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দিতে হবে।
কিন্তু বাস্তবতা অনেক জটিল। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩,২২৯ জনের নিয়োগ হয়ে গেছে, যাদের অনেকে এখন সিনিয়র পর্যায়ে উপসচিব বা তারও উপরের পদে কর্মরত। এখন নতুনভাবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের পদবি, সিনিয়রিটি, প্রশিক্ষণ ও বেতনক্রম নির্ধারণ নিয়ে প্রশাসনে এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন,
“রায় বাস্তবায়ন শুধু প্রশাসনিক নয়, নীতিগত সংকটও তৈরি করবে। সিনিয়রিটি রুলস থাকলেও এটি কার্যকর করা অত্যন্ত জটিল হবে।”
বয়স, অভিজ্ঞতা ও শারীরিক সক্ষমতার প্রশ্নও বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। একজন প্রার্থী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,
“৩০ বছর বয়সে পুলিশ ট্রেনিং নিতে পারতাম, এখন ৫০ বছর বয়সে সেটা সম্ভব নয়।”
অন্যদিকে, যারা দ্বিতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ বছর ধরে রাষ্ট্রকে সেবা দিচ্ছেন, তাদের মধ্যেও ন্যায্যতার প্রশ্ন জেগেছে। অনেকেই বলছেন, “যারা এত বছর পর এসে আমাদের সমান বা উপরে চলে যাবেন, তা প্রশাসনিকভাবে অন্যায্য।”
প্রশাসন ক্যাডারে উদাহরণস্বরূপ, এন্ট্রি পদ সহকারী কমিশনার হলেও বর্তমানে ২৭তম বিসিএসের অনেক কর্মকর্তা উপসচিব পদে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা কি আবার সহকারী কমিশনার হিসেবেই যোগ দেবেন? নাকি তাদের কোনো সমন্বিত সিনিয়রিটি দেওয়া হবে সে বিষয়ে সরকার এখনো কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়নি।
এ রায় একদিকে ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত হলেও, অন্যদিকে প্রশাসনিক বাস্তবতায় এটি এক “অভূতপূর্ব বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত” ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সরকারের এখনই উচিত স্পষ্ট গেজেট ও নীতিমালা প্রণয়ন করা, যাতে ১৭ বছরের পুরোনো ক্ষোভ প্রশমিত হয় এবং প্রশাসনের কার্যকর কাঠামো অক্ষুণ্ণ থাকে।
রায় বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনে ভারসাম্য রক্ষা, সিনিয়রিটি নির্ধারণ, প্রশিক্ষণ কাঠামো ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা এখন সরকারের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।