দেশে দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি দমনে কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি মহল দলবাজি, দখলবাজি ও চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের দুর্নীতিতে লিপ্ত রয়েছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহার প্রণয়ণে টিআইবির সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য উঠে আসে। প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর দুর্নীতি বেড়েছে বা কমেছে- এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের কাছে নেই, তবে দুর্নীতি চলছে এবং তার দৃষ্টান্তও দেখা গেছে।
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বড় সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা তা নিতে ব্যর্থ হয়েছে, এটা অস্বীকারের উপায় নেই।”
ইফতেখারুজ্জামান জানান, সরকারের অভ্যন্তরেও কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে, যা উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রশাসনিক প্রভাব ব্যবহার করে একটি মহল সরকারি স্পেসকে অপব্যবহার করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ৫২টি সুপারিশ উপস্থাপন করে। এর মধ্যে অন্যতম- ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরপেক্ষ ও দক্ষ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন। তিনি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রভাব সরিয়ে না নিলে সঠিক জবাবদিহি ও সুস্থ প্রতিযোগিতা সম্ভব নয়।
টিআইবির সুপারিশে আরও বলা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অপসারণ করতে হবে। অতীতে ঘটে যাওয়া ব্যাংক ও পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
ব্যবসা খাতের দুর্নীতি প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আইন দিয়ে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না; এটি ব্যবসায়ীদের মধ্যেই তৈরি করতে হবে।” টিআইবি এজন্য ‘বিজনেস ইন্টেগ্রিটি প্রোগ্রাম’ চালুর প্রস্তাব করেছে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে স্বচ্ছতার অভাবে কিছু ব্যবসায়ী লাভবান হলেও বৃহত্তর অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর একটি অংশ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ও কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ব্যবসায় খাতের দুর্নীতি দুদকের শিডিউলে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সুশাসন, শুদ্ধাচার, মানবাধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জ্বালানি, জলবায়ু ও বেসরকারি খাতে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি যুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা মো. জুলকারনাইন, গবেষণা ও নীতি পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের এবং আউটরিচ ও কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।