সরকারের খাদ্য মজুত দ্রুত কমে যাচ্ছে। আগস্টে ২২ লাখ মেট্রিক টন মজুতের রেকর্ড গড়ার পর দুই মাসের ব্যবধানে তা নেমে এসেছে ১৪ লাখ ১ হাজার মেট্রিক টনে। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার এবং গম মাত্র ৫৩ হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ২৩ অক্টোবরের তথ্য অনুযায়ী, এই পরিমাণ মজুত আপৎকালীন সীমার কাছাকাছি, যা ১৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন হিসেবে নিরাপদ ধরা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংগ্রহের তুলনায় বিতরণ বেশি হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার জানিয়েছেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও রেশনিংয়ে চাল সরবরাহ বাড়ায় মজুত কমেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে ৪ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল ইতিমধ্যে এসেছে। আরও তিনটি দেশের সঙ্গে আমদানি নিয়ে আলোচনা চলছে।
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১৭ আগস্ট থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হয়েছে, যেখানে এবার ৫৫ লাখ পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওএমএসসহ অন্যান্য কর্মসূচিতে প্রতি মাসে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য বিতরণ হচ্ছে। নভেম্বরে আরও ৩ লাখ মেট্রিক টন বিতরণ হবে। তবে ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া আমন মৌসুমে সংগ্রহ খুব বেশি হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ কৃষকরা ধান মজুত করে রাখেন।
চলতি অর্থবছরে খাদ্য আমদানি আশানুরূপ হয়নি। ১ জুলাই থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে ১৪.৮৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমদানি হয়েছে, যার মধ্যে সরকারি খাতে এসেছে মাত্র ৯৩ হাজার মেট্রিক টন। বাকি প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন এসেছে বেসরকারি খাত থেকে, যা সরকারি মজুতে প্রভাব ফেলছে না। গত অর্থবছরে সরকার ১৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমদানি করেছিল। এবার সেই পরিমাণ পূরণ করতে হলে আগামী আট মাসে আরও ১২ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করতে হবে।
বোরো মৌসুমে ১৮ লাখ মেট্রিক টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয়েছে ১৭ লাখ মেট্রিক টন। আমন মৌসুমেও সংগ্রহ কম হওয়ার আশঙ্কা থাকায় আমদানির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “মজুত দ্রুত না বাড়ালে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। চালের দাম বাড়লে ওএমএস কর্মসূচি দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে চাল ও গমের মজুত বাড়ানো প্রয়োজন।”