বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক সহিংসতায় ‘ভারতের ইন্ধন’ থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অক্ষম বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নিয়মিতভাবে অন্যের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমরা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। অন্তর্বর্তী সরকার নিয়মিতভাবে নিজেদের ব্যর্থতার দায় অন্যের ওপর চাপানোর অভ্যাস করেছে।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য উত্তম হবে তারা যদি নিজেদের ভেতরে তাকিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর উগ্রবাদীদের সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ভূমি দখলের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত চালায়।
২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় মারমা জাতিগোষ্ঠীর এক কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকে পার্বত্য জেলায় বিক্ষোভ ও উত্তেজনা শুরু হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ শয়ন শীল নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে। বাকিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
২৭ সেপ্টেম্বর সকালে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে অন্তত তিনজন নিহত হন। কয়েকটি দোকানে লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। যদিও পরে চিকিৎসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিশোরীর দেহে ‘ধর্ষণের কোনো আলামত’ পাওয়া যায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অভিযোগ করেন, “ভারতের ইন্ধনেই খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হচ্ছে।” তার দাবি, বাহ্যিক শক্তি ও ফ্যাসিস্ট মহল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে।
ভারত সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নিজস্ব সীমাবদ্ধতা আড়াল করতে বিদেশি হস্তক্ষেপের গল্প বানাচ্ছে।
বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই বক্তব্য কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে। ২০২৪ সালের ৮ আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই কূটনৈতিক অবস্থান ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে টানাপোড়েন চলে আসছে। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ভারতের প্রকাশ্য সমালোচনা পরিস্থিতিকে আরও স্পর্শকাতর করে তুলবে।