শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমীতে আজ সকালে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কুমারী পূজা। হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তের উপস্থিতিতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে এ পূজা সম্পন্ন হয়।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে কুমারী পূজা। এর আগে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে মহাষ্টমী পূজা, সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি এবং দুপুর ১২টায় মধ্যাহ্ন প্রসাদ পরিবেশন করা হয়। সন্ধ্যায় সন্ধিপূজা হবে সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে এবং সমাপন হবে সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, এক থেকে ১৬ বছরের অবিবাহিত কুমারী বালিকাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মতে, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর রূপ প্রকাশ পায় এবং মাতৃরূপ উপলব্ধিই কুমারী পূজার মূল উদ্দেশ্য।
ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের সহকারী সম্পাদক উত্তম মহারাজ বলেন, “কুমারী পূজা হলো নারীকে মাতৃশক্তির প্রতীক হিসেবে শ্রদ্ধা জানানো। আমাদের শাস্ত্রে বলা আছে, প্রতিটি নারীর মধ্যেই দেবীশক্তি বিদ্যমান। সেই শক্তিকে সম্মান জানাতেই প্রতিবছর মহাঅষ্টমীতে আমরা কুমারী পূজা আয়োজন করি।”
তিনি আরও জানান, এবারের পূজায় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন। সার্বিকভাবে পূজা শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, অসুর কোলাসুর স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করলে দেবতারা দেবীর শরণাপন্ন হন। দেবী মানবকন্যারূপে জন্ম নিয়ে কুমারী অবস্থাতেই কোলাসুরকে বধ করেন। সেই থেকেই কুমারী পূজার প্রচলন।
শাস্ত্র অনুযায়ী, বালিকার বয়স ভেদে তাদের ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন এক বছরের কন্যাকে ‘সন্ধ্যা’, দুই বছরের কন্যাকে ‘সরস্বতী’, পাঁচ বছরের কন্যাকে ‘সুভগা’, দশ বছরের কন্যাকে ‘অপরাজিতা’ এবং ষোলো বছরের কন্যাকে ‘অন্নদা’ বলা হয়।
প্রতি বছর দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমীতে সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছরের কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে পূজা করা হয়। এ পূজার মূল শিক্ষা হলো মানব বন্দনা, নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠা ও দেবীশক্তির আরাধনা।
আজকের কুমারী পূজা শেষে ভক্তরা জানান, তারা শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং নারীকে সম্মান ও মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠার বার্তাই এই পূজা থেকে ধারণ করেন।