সর্বশেষ

স্বচ্ছতার গালভরা বুলি

১৬ মাসেও প্রকাশ হয়নি উপদেষ্টাদের আয়–সম্পদের হিসাব

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৫৪
১৬ মাসেও প্রকাশ হয়নি উপদেষ্টাদের আয়–সম্পদের হিসাব

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের আয় ও সম্পদের বিবরণী এখনো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে সরকারের সদিচ্ছা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে।

 

২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর সব উপদেষ্টা দ্রুত নিজেদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করবেন। পরে এ নিয়ে একটি নীতিমালাও জারি করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী, উপদেষ্টাদের প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার পর ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সম্পদের বিবরণী প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সেই তথ্য কবে, কীভাবে জনসমক্ষে আসবে তা প্রধান উপদেষ্টার বিবেচনার ওপর নির্ভরশীল।

 

 

কিন্তু ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সেই তথ্যজাতীয় কোনো নথি প্রকাশ করা হয়নি। এরই মধ্যে উপদেষ্টা, তাঁদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এতে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

 

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও যদি সম্পদের তথ্য প্রকাশ না করা হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে—লুকানোর কী আছে?” তিনি মনে করেন, এটি ভবিষ্যৎ সরকারগুলোকেও জবাবদিহি এড়ানোর অজুহাত তৈরি করে দেবে।

 

সম্প্রতি সাবেক সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে “সীমাহীন দুর্নীতি”র অভিযোগ তোলেন। অন্যদিকে এক সাবেক সাংসদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নামও আসে।

 

 

সাবেক সচিবের ভাষ্যমতে, গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ ও বদলিতে উপদেষ্টাদের প্রভাব ছাড়া কিছুই হচ্ছে না এমন ইঙ্গিত দেন তিনি। সরকার অবশ্য এসব অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তবে কোনো অভিযোগেই এখন পর্যন্ত সরকার নিজ উদ্যোগে তদন্তে নামেনি।

 

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণ ব্যাংক’-এর প্রতি অনুমোদন ও সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। কর অব্যাহতি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন, জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স—এসব সিদ্ধান্তকে অনেকেই “সম্ভাব্য স্বার্থের দ্বন্দ্ব” হিসেবে দেখছেন।

 

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “ক্ষমতায় থাকাটাই প্রভাব বিস্তারের জন্য যথেষ্ট। তাই প্রক্রিয়াটি কতটা স্বচ্ছ ছিল, সেটির ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি।”

 

 

গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, উপদেষ্টারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মাসিক বা বার্ষিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ করেননি। তাঁর দাবি, সরকারের আশেপাশে থাকা সুবিধাভোগী গোষ্ঠীই জবাবদিহি ঠেকিয়ে দিচ্ছে কারণ স্বচ্ছতা শুরু হলে তাদেরই নাম প্রকাশ হয়ে পড়বে।

 

বিশ্লেষকদের মতে, শুরুতে সরকারের প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা এখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। এই আস্থাহীনতা ভবিষ্যৎ নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেও দুর্বল করতে পারে।

 

১৬ মাস পরও সম্পদের হিসাব প্রকাশ না হওয়ায় স্বচ্ছতা, নৈতিকতা এবং জবাবদিহিতার অঙ্গীকার এখন কেবলই গালভরা বুলি হয়ে রয়ে গেছে।

সব খবর

আরও পড়ুন

ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় উদযাপন, গির্জাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

শুভ বড়দিন আজ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় উদযাপন, গির্জাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ, বাংলাদেশে অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের চিঠি আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ, বাংলাদেশে অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান

অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে ২০ ফেব্রুয়ারি

রমজানে আয়োজন নিয়ে উদ্বেগ অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে ২০ ফেব্রুয়ারি

এবার বাংলাদেশ বন্ধ করলো ভারতীয়দের ভিসা পরিষেবা

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা এবার বাংলাদেশ বন্ধ করলো ভারতীয়দের ভিসা পরিষেবা

হত্যা–সহিংসতা ঠেকাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার: সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা

হত্যা–সহিংসতা ঠেকাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার: সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা

ঢাকা-কক্সবাজারসহ ছয় রুটে বেড়েছে ট্রেনের ভাড়া

ঢাকা-কক্সবাজারসহ ছয় রুটে বেড়েছে ট্রেনের ভাড়া

মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতি এ কে খন্দকার বীর উত্তমের প্রয়াণ

জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের অবসান মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতি এ কে খন্দকার বীর উত্তমের প্রয়াণ

ভারতের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে: রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব

হিন্দুস্থান টাইমসে হর্ষবর্ধন শ্রীংলার কলাম ভারতের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে: রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব