বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা ও নিপীড়নের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে লন্ডন সরকার জানিয়েছে, তারা এ ধরনের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ঘৃণাজনিত কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায় এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
এই বিবৃতিটি আসে যুক্তরাজ্যের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (APPG) ফর ব্রিটিশ হিন্দুজ-এর এক বৈঠকের পর, যেখানে “ইনসাইট ইউকে” নামের একটি সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর চালানো নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড, মন্দির ধ্বংস এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক সময় পরিবারগুলোকে ঘরের ভেতরে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার মধ্যে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য বব ব্ল্যাকম্যান বিষয়টি পার্লামেন্টে উত্থাপন করে বলেন, “আগামী সপ্তাহে হিন্দু, শিখ ও জৈন ধর্মাবলম্বীরা দীপাবলি ও নববর্ষ উদযাপন করবে। কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দুরা এখন ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে। ইনসাইট ইউকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের মন্দির ভাঙা হচ্ছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এমনকি পরিবারের সদস্যদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। সরকার কি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ নেবে?”
এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে ব্ল্যাকম্যান লিখেছেন, “দীপাবলি আলো ও অন্ধকারের যুদ্ধের প্রতীক। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুরা কোনো উৎসব উদযাপন করতে পারছে না; তারা সহিংসতা, নিপীড়ন ও ঘরবাড়ি ধ্বংসের শিকার।”
প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্য সরকারের এক মন্ত্রী বলেন, “আমরা যে কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘুর প্রতি ঘৃণা ও সহিংসতার ঘটনাকে দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানাই। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং সেখানে মানবিক সহায়তা ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়াকে সমর্থন করছি।”
তিনি আরও বলেন, “মানবাধিকার রক্ষা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সময় উপযোগী মনে হলে সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবে এবং সংসদে আলোচনার সুযোগ থাকবে।”
বিশ্বজুড়ে যখন হিন্দু, শিখ ও জৈন সম্প্রদায় দীপাবলি ও নববর্ষের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান সহিংসতা আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।