সংবিধান সংস্কার একটি সংবেদনশীল বিষয় এবং এই প্রক্রিয়া অবশ্যই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন এ অভিমত ব্যাক্ত করেন। এ সময় তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, “সংবিধান আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি। এটি ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও জাতির ঐক্যের প্রতীক। কোনো ব্যক্তি এককভাবে সংবিধান পরিবর্তন করার অধিকার রাখেন না। সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণের ইচ্ছা ও মৌলিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল। ৫৩ বছরে নানা পরিবর্তন এসেছে, তবে পরিবর্তনের দায় সব সময় সংবিধানের নয় বরং গণতন্ত্রহীনতা ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণকেই দায়ী করতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, বিগত সময়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের ফলে জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে রচিত সংবিধান অক্ষত থাকবে। বর্তমান সরকারের সেই সংবিধানে হাত দেওয়ার কোনো অধিকার নেই।” তিনি সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবগুলো জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, “ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।”
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে সুব্রত বলেন, “ছাত্রদের রাজনীতির মাঠে নামিয়ে আপনি তাদের তৃতীয় শক্তি বানিয়েছেন। এখন তারা সরকারের বিভিন্ন জায়গায় পদ–পদবি নিচ্ছে, নিয়োগ বাণিজ্য করছে যা দেশের জন্য ক্ষতিকর।”
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নারীপক্ষের সভাপতি শিরীন হকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা সংবিধান সংস্কার নিয়ে জাতীয় সংলাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।