ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মুক্তিযোদ্ধা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকদের ওপর ‘মব হামলা’র ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে এক বিবৃতিতে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের নীরবতা ও পরোক্ষ মদদে দেশে মব সন্ত্রাস ভয়াবহভাবে বেড়েই চলছে। হামলার শিকারদের পরিবর্তে তাদেরকেই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে প্রশাসন আসলে সন্ত্রাসীদের আরও উৎসাহিত করছে। এতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি চব্বিশের আন্দোলন আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
উদীচীর নেতারা অভিযোগ করেন, "নিজেদের ‘জুলাইযোদ্ধা’ দাবি করা সুবিধাবাদীরা প্রকৃতপক্ষে চব্বিশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এদের প্রতিরোধ করতে না পারলে বৈষম্যহীন, সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্নে অসংখ্য মানুষ জীবন দিয়েছে, তা পূরণ হবে না।"
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত আলোচনায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। প্ল্যাটফর্মটির সমন্বয় করছেন গণফোরামের নেতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (বীর প্রতীক) এবং আইনজীবী জেড আই খান পান্না। প্রধান অতিথি হিসেবে সাবেক সভাপতি কামাল হোসেনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসার আগেই একদল ব্যক্তি ভেতরে ঢুকে হট্টগোল শুরু করে এবং মুক্তিযোদ্ধা ও বক্তাদের ঘিরে ফেলে।
সাবেক সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন ও সাংবাদিক মনজুরুল ইসলাম পান্নাসহ আরও অনেকে ওই হামলার শিকার হন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলাকারীরা স্লোগান দিচ্ছে, "একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর।"
হামলায় মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, জাসদ নেতা আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম এবং কেশব রঞ্জন সরকারসহ কয়েকজন মারাত্মকভাবে আহত হন। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। রাতে জানানো হয়, তাদের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) আদালত লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে আইনজীবীরা জামিনের আবেদন না করায় তিনি কারাগারেই রয়েছেন।
উদীচী তাদের বিবৃতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের ওপর হামলায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছে।