বাংলাদেশ এখন এক জটিল রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে অক্ষম, অন্যদিকে শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা, সংস্কার প্রতিশ্রুতির অপূর্ণতা এবং জনমতের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা মিলিয়ে এক অদ্ভুত বিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইস্যু ও জনরোষ
প্রবল সমালোচনার মুখেও যখন সরকার বন্দর বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে অনড় তখন গত ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক বিদেশি কোম্পানিকে বন্দরের অপারেটিং লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বন্দর শ্রমিকদের অনশন ও প্রতিবাদ ছিল। এই ঘটনা সরকারের জনসম্পৃক্ততার অভাবকে সামনে নিয়ে আসে।
রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ও দলগুলোর অবস্থান
আওয়ামী লীগের শাসনকাল শেষে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও, নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ এখনো অস্পষ্ট। জামায়াতে ইসলামী থেকে শুরু করে বিএনপি পর্যন্ত সবাই সংস্কার ও অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম ও পরামর্শদাতাদের ভূমিকা
এই সরকার যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সরকার। বিদেশে বসে থেকে সামাজিক মাধ্যমের “গ্ল্যাডিয়েটর”রা এখন উস্কানি দিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠান ভাঙার খেলায় মত্ত, আর সরকার প্রবাসী এসব উগ্রবাদীদের ব্যাপারে এবং বিদেশি পরামর্শদাতাদের প্রতি অদ্ভুত নির্ভরতা দেখাচ্ছে। স্বজনপ্রীতি ও অযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, যা নির্বাচন পরিচালনায় বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট তৈরি করছে।
সংস্কার কমিশন ও নাগরিক সমাজ
সংস্কার কমিশনগুলো “টিক মার্ক” সংস্কার চালাচ্ছে, যা বাস্তব পরিবর্তনের বদলে কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। নাগরিক সমাজের নৈতিক অবস্থান এখন টক শো আর হতাশা প্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
নিরাপত্তা, বিচার ও সেনাবাহিনীর অবস্থান
জুলাই ২০২৪-এর পটপরিবর্তনের পর সামাজিক ট্রমা ও উগ্রবাদ সংশ্লিষ্ট আশঙ্কা বাড়ছে। সেনাবাহিনী এখন রাজনৈতিক নাটকে জড়াতে অনিচ্ছুক, যা ক্ষমতার শূন্যতা আরও গভীর করছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর আশঙ্কা নিয়েও সতর্ক করেছেন পর্যবেক্ষকরা।
সামনে কী?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হবে কি না। যদি অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ ব্যর্থ হয়, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে।
লেখক: শাহাব এনাম খান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ইনডো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স সেন্টারের প্রধান এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর শিক্ষক