দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ গোপনে বিদেশে পাচার করার এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে খোদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে। কোনো ধরনের কূটনৈতিক বা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছাড়াই হঠাৎ ঢাকায় আজারবাইজানের বিতর্কিত ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’র সদস্যদের আগমন এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক এই সন্দেহকে আরও ঘনীভূত করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রামীণ টেলিকমের বিপুল সম্পদ অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে সরিয়ে নিতেই আন্তর্জাতিক অর্থ পাচারে অভিযুক্ত চক্রের সঙ্গে এই ‘গোপন আঁতাত’ গড়ে তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশে আজারবাইজানের কোনো দূতাবাস নেই, নেই উল্লেখযোগ্য কোনো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। অথচ গত ৭ ডিসেম্বর আকস্মিকভাবে ঢাকায় হাজির হন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের দুই কন্যা—লেয়লা আলিয়েভা ও আরজু আলিয়েভা। কোনো প্রটোকল বা পূর্বঘোষণা ছাড়াই ড. ইউনূসের সঙ্গে তাদের এই বৈঠককে ‘কূটনৈতিক সৌজন্য’ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও, এর নেপথ্যে রয়েছে হাজার কোটি টাকা পাচারের এক সুগভীর নীল নকশা।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে গ্রামীণ টেলিকমের প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিদেশে সরিয়ে ফেলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। আর এই কাজে সহযোগী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে কুখ্যাত আলিয়েভ পরিবারকে।
যাদের সঙ্গে বৈঠক করে ড. ইউনূস দেশের সম্পদ নিয়ে আলোচনা করছেন, সেই লেয়লা ও আরজু আলিয়েভা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের জন্য চিহ্নিত। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দলিল ‘পানামা পেপার্স’-এ তাদের নাম উঠে এসেছে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারকারী হিসেবে।
অভিযোগ রয়েছে, আজারবাইজানের মোবাইল অপারেটর ‘আজারসেল’-এর লভ্যাংশ যেভাবে অবৈধ উপায়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে, ঠিক একই কায়দায় বাংলাদেশের গ্রামীণ টেলিকমের হাজার কোটি টাকা পাচার করার জন্যই তাদের ‘পরামর্শক’ বা ‘অংশীদার’ হিসেবে ঢাকায় আনা হয়েছে।
গ্রামীণ টেলিকম কোনো ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান নয়; এটি গড়ে উঠেছিল গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের টাকায় যা মূলত এদেশের দরিদ্র মানুষের আমানত। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার গ্রামীণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য এই লাইসেন্স দিয়েছিল। অথচ আজ সেই প্রতিষ্ঠানটিকে ড. ইউনূস নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে এর হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বর্তমানে গ্রামীণফোনে গ্রামীণ টেলিকমের ৩৪.২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির হাতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এই বিশাল অঙ্কের টাকা দেশের অর্থনীতিতে যোগ না করে, অফশোর একাউন্টের মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াই এই বৈঠকের মূল এজেন্ডা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাৎ এবং আর্থিক অনিয়মের দায়ে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বিচারিক প্রক্রিয়ায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর করে (Liquidate) বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এই তড়িঘড়ি।
শেয়ার বিক্রি বা মালিকানা হস্তান্তরের নামে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের সহায়তায় এই সম্পদ পাচার হলে বাংলাদেশ হারাবে তার অন্যতম বৃহৎ একটি অর্থনৈতিক ভিত্তি।
রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে এমন সন্দেহজনক তৎপরতা চললেও সরকার বা সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো (বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি) রহস্যজনকভাবে নীরব। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের কন্যাদের সঙ্গে কী কথা হলো, কেন এই আকস্মিক সফর সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে কোনো স্বচ্ছ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
জনগণের মনে প্রশ্ন জেগেছে গরিবের রক্ত পানি করা টাকায় গড়া প্রতিষ্ঠানের সম্পদ কি এভাবেই চোখের সামনে দিয়ে পাচার হয়ে যাবে? ড. ইউনূস কি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত? এই ‘রহস্যময়’ বৈঠকের প্রকৃত সত্য উদঘাটন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখনই কঠোর নজরদারির দাবি উঠেছে।