ঢাকা-কক্সবাজারসহ দেশের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ রুটে ট্রেনের ভাড়া বেড়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘পন্টেজ চার্জ’ বা সেতু মাশুল আরোপের মাধ্যমে এই ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করেছে, যা গতকাল থেকেই প্রযোজ্য হচ্ছে।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার সরাসরি টিকিটের মূল দাম না বাড়িয়ে নতুন করে পন্টেজ চার্জ যোগ করা হয়েছে। এর ফলে আসন ও রুটভেদে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বেড়েছে। গত ১৩ বছরে বিভিন্ন সময়ে সরাসরি কিংবা কৌশলে অন্তত পাঁচবার ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হলো।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-সিলেট, চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-জামালপুর এবং ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ—এই ছয় রুটের মোট ১১টি সেতুতে পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হয়েছে। এসব সেতু ব্যবহার করেই সংশ্লিষ্ট রুটগুলোতে ট্রেন চলাচল করে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, সব রুটে নয়, নির্দিষ্ট কিছু রুটে এই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এটি সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, পুরোনো সেতুগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতেই এই পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া গত কয়েক বছরে ধাপে ধাপে বেড়েছে। ২০১২ সালে যেখানে ভাড়া ছিল ৫৮৫ টাকা, ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয় ৭২৫ টাকা। ২০২৪ সালে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের পর ভাড়া দাঁড়ায় ৮৫৫ টাকায়। নতুন পন্টেজ চার্জ যুক্ত হওয়ার পর এখন এই আসনের ভাড়া বেড়ে হয়েছে ৯৪৩ টাকা।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটেও ভাড়ায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। এ রুটে চলাচলকারী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ১ হাজার ৩২২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৪৯ টাকা। একই সঙ্গে এসি বার্থের ভাড়া ২ হাজার ৪৩০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৫৬ টাকায়। এই রুটে সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভাড়া বৃদ্ধির খবরে যাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, সরাসরি ভাড়া না বাড়ালেও পন্টেজ চার্জের মাধ্যমে যাত্রীদের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। আবার রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও সেবার মান ধরে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে যাত্রীদের একটি অংশ আশা করছেন, বাড়তি ভাড়ার বিপরীতে ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা, নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবার মানে দৃশ্যমান উন্নতি আনবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।