স্বাধীনতার রক্তাক্ত জন্ম থেকে আজকের বাস্তবতায় বাংলাদেশ যেন এক গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়া-এ প্রকাশিত বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দেশটি এখন আর কেবল শাসন সংকটে নয় বরং রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও জাতীয় উদ্দেশ্যের পতনে দাঁড়িয়ে আছে।
লেখক আনোয়ার এ. খান লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদরা যে বাংলাদেশ কল্পনা করেছিলেন—সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র—আজ তা ভিন্ন চেহারা নিয়েছে। ভয়, আইনহীনতা, নারীর নিরাপত্তাহীনতা, সংখ্যালঘুদের অবহেলা এবং বিচারহীনতা এখন দৈনন্দিন বাস্তবতা। রাষ্ট্র যখন নাগরিকের জীবন, সম্পদ ও মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তখন তা কার্যত পতনের পথে চলে যায়।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট ২০২৪-এ শেখ হাসিনাকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর ৮ আগস্ট ২০২৫-এ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকারের প্রধান হিসেবে বসানো হয়। লেখকের মতে, এটি ছিল না কোনো গণতান্ত্রিক সংস্কার, বরং একটি সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা। তিনি দাবি করেন, বর্তমান সরকার জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করছে না, বরং বিদেশি শক্তির ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল সংযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছিল। কিন্তু তার অপসারণের পর দেশটি অরাজকতা ও সহিংসতায় নিমজ্জিত হয়েছে। রাজনৈতিক নিপীড়ন, জনতার সহিংসতা এবং চরমপন্থী শক্তির উত্থান এখন বাস্তবতা। লেখক সতর্ক করেছেন, এ পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, আজকের বাংলাদেশে সেক্যুলারিজম, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। যারা প্রশ্ন তুলছেন, তাদেরকে দমন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রকে ভেতর থেকে ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে, আর জনগণকে আইনহীনতাকে “সংক্রমণ” ও দমনকে “সংস্কার” হিসেবে মেনে নিতে বলা হচ্ছে।
লেখক মনে করেন, সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো সাংবিধানিক বৈধতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা। তার মতে, শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তন এখন আর রাজনৈতিক পছন্দ নয়, বরং জাতীয় প্রয়োজন। তিনি লিখেছেন, “শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, তাই তিনি এখনো বৈধ প্রধানমন্ত্রী। তার অভিজ্ঞতা ও জনপ্রিয় ম্যান্ডেটই বাংলাদেশকে অরাজকতা থেকে রক্ষা করতে পারে।”
নিবন্ধে সতর্ক করা হয়েছে, বাংলাদেশকে কোনো বিদেশি শক্তির পরীক্ষাগার বা ভূ-রাজনৈতিক প্রকল্পে পরিণত করা যাবে না। জনগণের ইচ্ছাই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। লেখক আহ্বান জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন শেখ হাসিনাকে তার বৈধ নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।