বাংলাদেশে ঋণের চাপে আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। চড়া সুদ, কিস্তির চাপ, সামাজিক কটূক্তি এবং মানসিক অবসাদ—সব মিলিয়ে অনেক ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করছেন, যা সমাজে ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩ অনুযায়ী, দেশের এক-চতুর্থাংশ পরিবার মৌলিক চাহিদা পূরণে ঋণ গ্রহণ করে। শহরের তুলনায় গ্রামে এই প্রবণতা বেশি, যেখানে অধিকাংশ মানুষ এনজিও বা ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়। ক্ষুদ্রঋণ অনেকের জন্য আশার আলো হলেও, চড়া সুদ ও কিস্তির কঠোর নিয়মে তা অনেকের জন্য গলার ফাঁস হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি আত্মহত্যার কয়েকটি ঘটনা আলোচনায় এসেছে। রাজশাহীর মিনারুল ইসলাম (৩৫) স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেন। চিরকুটে লেখেন, “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।” পিরোজপুরের ব্যবসায়ী নান্না ফরাজী (৫৫) কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন। তাঁর চিরকুটে লেখা ছিল, “দেনা শোধের কোনো পথ নাই, দুনিয়া ছেড়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই।”
রাজশাহীর মোহনপুরে আকবর হোসেন (৫০) নামের এক কৃষক ১১টি এনজিও ও সুদ কারবারিদের কাছ থেকে ৬-৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মহত্যা করেন। তাঁর ছেলে জানান, প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা কিস্তির চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি গলায় ফাঁস নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অতনু রব্বানী বলেন, “ঋণের চাপে আত্মহত্যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঋণ দেওয়ার আগে যথাযথ যাচাই-বাছাই করা উচিত।”
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ জানান, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়া হয় উৎপাদনশীল কাজে নয়, বরং বিয়ে বা আগের ঋণ শোধে। অতিরিক্ত ঋণগ্রস্ত হলে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে মানুষ, কেউ আর সাহায্য করতে চায় না। তখন আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকট মোকাবেলায় দরকার মানবিক ঋণনীতি, সামাজিক সহায়তা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রসার। অন্যথায়, ঋণের ফাঁস থেকে মুক্তি নয়, বরং আরও মৃত্যুর খবরই বাড়বে।