সর্বশেষ

জনপ্রশাসন সংস্কার থেমে আছে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বে

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০০:৩৬
জনপ্রশাসন সংস্কার থেমে আছে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বে

জনপ্রশাসন সংস্কারের গতি থেমে গেছে বিভিন্ন ক্যাডারের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল ১৮টি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র তিনটি। বাকিগুলো আটকে আছে আন্তঃক্যাডার বিরোধ ও মতানৈক্যের জটিলতায়।

 

গত ২২ মে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএসএ) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিন পক্ষকে যৌথ সুপারিশ দেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও, ৩০ জুনের আলোচনায় কোনো ঐক্যমত্যে পৌঁছানো যায়নি। ফলে প্রশাসনিক সংস্কার কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।

 

বিএএসএর সভাপতি ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “সব ক্যাডার কর্মকর্তার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু কিছু বক্তব্য শৃঙ্খলাবিরোধী হওয়ায় সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি।”

 

অন্যদিকে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, “প্রশাসন ক্যাডারের প্রতিনিধিরা শর্ত দেন উপসচিব পদের কোটা নিয়ে আদালতে থাকা রিভিউ মামলা প্রত্যাহার না করলে আলোচনা হবে না। অথচ এ মামলাটি সংস্কার প্রক্রিয়ারই অংশ।”

 

উপসচিব পদই মূল দ্বন্দ্বের কেন্দ্র

 

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০% এবং বাকি ৫০% পদ অন্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য উন্মুক্ত রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা এটিকে বৈষম্যমূলক বলে দাবি করছেন। তাদের মতে, প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তার জন্য সমান ভাগে কোটা বরাদ্দ অযৌক্তিক।

 

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, “উচ্চ আদালতের রায়ে ৭৫% প্রশাসন ও ২৫% অন্যান্য ক্যাডারের পদোন্নতি ব্যবস্থা বহাল আছে, এ বিষয়ে নতুন প্রস্তাব অপ্রয়োজনীয় ও উদ্বেগজনক।”

 

অন্যান্য সংস্কারেও অচলাবস্থা

 

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ ও পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আরও ১৭টি বিষয়ে যৌথ সুপারিশ জমা দিলেও প্রশাসন ক্যাডারের সমর্থন মেলেনি। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি, প্রেষণ, স্বাধীন তদন্ত কমিশন, জেলা পরিষদ বিলুপ্তি, ক্যারিয়ার পরিকল্পনা, সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস ও প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয়।

 

অন্যদিকে জুলাই জাতীয় সনদে জনপ্রশাসন সম্পর্কিত ছয়টি প্রস্তাব নিয়েও ক্যাডারদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এর মধ্যে স্বাধীন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, পিএসসি বিভাজন ও পুলিশ কমিশন প্রতিষ্ঠা অন্যতম।

 

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাধান অসম্ভব

 

সাবেক সচিব এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, “সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব কোনো পক্ষই গ্রহণযোগ্য মনে করছে না। পারস্পরিক শ্রদ্ধার অভাব ও অযৌক্তিক চাহিদাই মূল বাধা। এ অবস্থায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই একমাত্র সমাধান।”

 

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “ক্যাডারদের ঐকমত্য না হওয়ায় প্রশাসন সংস্কারে কোনো সিদ্ধান্ত সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চাই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই জট খুলুক।”

সব খবর

আরও পড়ুন

দুদক অধ্যাদেশে ‘বাছাই কমিটি’ না থাকা নিয়ে ক্ষোভ টিআইবি’র

রাষ্ট্রসংস্কার কি ফাঁকাবুলি? দুদক অধ্যাদেশে ‘বাছাই কমিটি’ না থাকা নিয়ে ক্ষোভ টিআইবি’র

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ছিনতাই হবার পরবর্তী প্রেক্ষাপট

শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত বিশ্লেষণ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ছিনতাই হবার পরবর্তী প্রেক্ষাপট

ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেলেন ৩৩ পুলিশ কর্মকর্তা

ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেলেন ৩৩ পুলিশ কর্মকর্তা

লিখিত পরীক্ষার আগের দিন ৪৭তম বিসিএস বর্জনের ঘোষণা প্রিলি উত্তীর্ণদের একাংশের

‘রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে হেরে গেছি’ লিখিত পরীক্ষার আগের দিন ৪৭তম বিসিএস বর্জনের ঘোষণা প্রিলি উত্তীর্ণদের একাংশের

ডেঙ্গুতে সংক্রমণ ও মৃত্যু আবারও ঊর্ধ্বমুখী

চলতি বছরে মৃত্যু ৩৭০ ডেঙ্গুতে সংক্রমণ ও মৃত্যু আবারও ঊর্ধ্বমুখী

দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে বাংলাদেশের ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে বাংলাদেশের ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ

বাংলাদেশে ১ লাখ টন চাল রপ্তানির প্রস্তুতি পাকিস্তানের

হঠাৎ ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন বাংলাদেশে ১ লাখ টন চাল রপ্তানির প্রস্তুতি পাকিস্তানের

মালয়েশিয়ায় চাকরির জন্য বাংলাদেশিদের গুনতে হচ্ছে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত

মালয়েশিয়ার সাবেক মন্ত্রী জুরাইদার অভিযোগ মালয়েশিয়ায় চাকরির জন্য বাংলাদেশিদের গুনতে হচ্ছে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত