সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা পরিবর্তন করে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাতিল করায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সংগঠনটি বলেছে, এই সিদ্ধান্ত দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার সামিল।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের হুমকি ও চাপের মুখে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের মতে, এই পদক্ষেপ সরকারের “নতজানু ও পরাজিত চরিত্র” প্রকাশ করেছে, যা জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত অশুভ সংকেত।
“সংস্কৃতি বিকাশে রাষ্ট্রের দায়িত্বকেই অস্বীকার”
উদীচী বলছে, কোমলমতি শিশুদের শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত রাখা আধুনিক, মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গঠনের অন্যতম শর্ত। সুকুমারবৃত্তি বিকাশের মাধ্যমে শিশুদের মানবিক মূল্যবোধ তৈরি করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে সংস্কৃতিকর্মীরা পাঠ্যক্রমে শিল্পকলা, সংগীত, সাহিত্যসহ সাংস্কৃতিক বিষয় যুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। কারণ “শিশু-কিশোরদের রুচি, মনন, কল্পনা ও চরিত্র গঠনে সংগীত-শিল্প-সাহিত্যের বিকল্প নেই।”
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি ছিল “সংস্কৃতিকর্মীদের দীর্ঘ আন্দোলনের বড় অর্জন” — যা সরকার বাতিল করে “ন্যাক্কারজনক নজির” স্থাপন করেছে।
“ধর্মাশ্রয়ী উগ্রবাদী চাপ দেশে নতুন ফ্যাসিবাদ কায়েম করছে”
উদীচীর অভিযোগ, হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে অতীতেও শিক্ষা-সংস্কৃতি খাতে অপসারণ ও পরিবর্তন করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে অসাম্প্রদায়িক, মুক্তচিন্তার লেখক ও রচনাবলি বাদ দেওয়া তার বড় উদাহরণ।
বিবৃতিতে বলা হয়, “মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদী ভাবাদর্শ পরাজিত হয়েছিল। কিন্তু আজ ধর্মের নামে নতুন করে ফ্যাসিবাদ কায়েম হচ্ছে। বিভক্তিবাদী, ঘৃণাবাদী, সাম্প্রদায়িক শক্তি রাষ্ট্রের নীতিতে প্রবেশ করেছে, যারা সংগীত-শিল্প-সাহিত্যের বিরুদ্ধে কুঠারহস্ত।”
সরকারকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি
উদীচী স্পষ্টভাবে বলেছে, যে ভাবাদর্শ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পরাজিত হয়েছিল তা এ দেশের শিক্ষা বা রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হতে পারে না। ধর্মের নামে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর আঘাত জনগণ মেনে নেবে না।
বিবৃতিতে সংগঠনটি সরকারকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাতিলের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানায়।