১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে’ রাখতে পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য বাহিনীর প্যাট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘সন্দেহভাজন’ কাউকে দেখলেই তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। তার দাবি, নিরাপত্তা বাহিনী শক্ত অবস্থানে থাকায় কোনো আশঙ্কা নেই।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে আমাদের কার্যক্রম চলছে। কেউ ‘নাশকতার’ চেষ্টা করলে ছাড় নেই।” আদালতের ওপর হস্তক্ষেপের নগ্ন স্বীকারোক্তি দিয়ে এসময় তিনি বলেন, “অনেক সময় আওয়ামী লীগের লোকজন দ্রুত জামিন পেয়ে যায়, আমি আদালতকে অনুরোধ করব, তাদের জামিন যেন সহজে না দেওয়া হয়।” তিনি জানান, রাজধানী আটটি জোনে ভাগ করে বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে, যাতে ওই তেল ব্যবহার করে আগুন লাগানো না যায়।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই নিরাপত্তা বাহিনীর মহড়া হবে। পাশাপাশি বডি ওর্ন ক্যামেরা কেনার প্রক্রিয়া শেষের পথে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা- মেট্রোরেল, রেলওয়ে, ট্রাইব্যুনাল ও অন্যান্য ‘কেপিআই’-তে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানও আরও তীব্র করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আরাকানের দিক থেকে মাদকের চালান কিছুটা কমেছে, তবে তা আশাব্যঞ্জক নয়। সমাজ থেকে মাদক সরাতে সবার দায়িত্ব রয়েছে।” দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক এবং অভিযান নিয়ে উদ্বেগ উঠলেও তিনি দাবি করেন, এতে পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা নেই: “বাড়িতে বাচ্চারা দুষ্টুমি করলে যেমন শাসন করেন, এও তেমনই।”
এদিকে একই দিনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং কোস্টগার্ড ও বিজিবিতে সমপদমর্যাদার প্রেষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আরও সাড়ে তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা ১২ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশজুড়ে ফৌজদারি কার্যবিধির বিভিন্ন ধারার অধীনে অভিযান, গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং ১৭ সেপ্টেম্বর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়। এরপর থেকে সরকার ধাপে ধাপে সেই ক্ষমতার মেয়াদ বাড়িয়ে আসছে। ১৩ নভেম্বরের উত্তাপ বাড়তে থাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নিজেদের দমন কাঠামো আরও শক্ত করার অভিপ্রায় হিসেবে পরিগণিত হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান দুর্বল হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।