সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ধারাবাহিক সহিংসতা, হত্যা ও নিপীড়ন ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা। সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সংগঠনের নেতারা এ অভিযোগ করেন।
সমাবেশে বক্তারা ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যকর ও দৃশ্যমান ভূমিকা দাবি করেন তারা।
সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার যুগ্ম সমন্বয়ক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দীপু চন্দ্র দাসকে মারধর ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার এতদিন পরও সরকার নিহতের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি, যা চরম উদাসীনতার পরিচয়। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, মানবিক বাংলাদেশের কথা বলা হলেও বাস্তবে সংখ্যালঘুদের জন্য পরিস্থিতি অমানবিক হয়ে উঠেছে। তিনি সব সম্প্রদায়ের মানুষকে প্রধান উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
আসন্ন নির্বাচন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মনীন্দ্র কুমার নাথ। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আদৌ স্বাধীন ও নিরাপদভাবে ভোট দিতে পারবে কি না—তা নিয়ে গভীর শঙ্কা রয়েছে। তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত চৌধুরী বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ দেশজুড়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। নির্বাচনের আগে পরিকল্পিতভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে সহিংসতা আরও বাড়ছে। তিনি গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ছায়ানট ও উদীচীর ওপর হামলার পরও সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক সুস্মিতা কর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানান। মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহণকারীরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সহিংসতা বন্ধের দাবিতে একটি প্রতিবাদ মিছিল করেন।