সরকার ফরিদপুর ও কুমিল্লা নামেই দুটি নতুন প্রশাসনিক বিভাগ গঠনের পথে এগোচ্ছে। পাশাপাশি কুমিল্লার মুরাদনগর ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ভেঙে দুটি নতুন উপজেলা—‘বাঙ্গরা’ ও ‘ফটিকছড়ি উত্তর’—গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সূত্র জানায়, আগামী মাসে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর প্রি-নিকার বৈঠকে ফরিদপুর ও কুমিল্লা শহরের নামেই বিভাগ গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর নিয়ে ফরিদপুর বিভাগ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
বর্তমানে দেশে মোট আটটি বিভাগ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ময়মনসিংহকে বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০২২ সালে ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ নামে দুটি বিভাগ গঠনের প্রস্তাব উঠলেও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তা স্থগিত রাখা হয়।
তবে নতুন বিভাগ গঠনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশাসনের ভেতরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা মনে করছেন, তথ্য-প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে নতুন বিভাগ গঠনের প্রয়োজন নেই।
“নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠার কোনো যুক্তি নেই, শুধু শুধু জনগণের খরচ বাড়বে,” মন্তব্য করেন অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা এক সাবেক সচিব। তিনি বলেন, বিদ্যমান বিভাগ থেকেই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কার্যকর তদারকি সম্ভব।
এক যুগ্ম সচিব বলেন, “প্রযুক্তির কারণে বিভাগীয় প্রশাসন না বাড়িয়ে বরং ছোট করার সুযোগ আছে। বড় আকারে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার মতো কাজ বিভাগগুলোতে নেই। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচের খাত তৈরি করার কোনো মানে হয় না।”
আরেক সাবেক সচিব বলেন, “নতুন বিভাগ মানেই আমলাতান্ত্রিক পদ সৃষ্টি, খরচ বৃদ্ধি এবং স্থানীয় রাজনীতিকদের নতুন প্রকল্পের সুযোগ। এতে জনস্বার্থ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক ঘণ্টার নোটিশে ৬৪ জেলার ডিসিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করতে পারে। এই সময়ে বিভাগীয় প্রশাসন বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।”