বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আরো চারজন সদস্য। নাট্যব্যক্তিত্ব আজাদ আবুল কালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, ছায়ানটের সঙ্গীত শিক্ষক লায়েকা বশীর এবং নৃত্যশিল্পী র্যাচেল অ্যাগনেস প্যারিস বুধবার মহাপরিচালক শেখ রেজাউদ্দিন আহমেদ (রেজাউদ্দিন স্টালিন)-এর কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পদত্যাগপত্রে আজাদ আবুল কালাম লিখেছেন, পরিষদকে সম্পূর্ণ অকার্যকর রেখে ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের শহীদের রক্তের প্রতি অবিচার’। তিনি বলেন, বেআইনিভাবে একাডেমি পরিচালিত হলেও পরিষদকে ইচ্ছাকৃতভাবে পাশ কাটিয়ে রাখা হয়েছে। এর দায়ভার নিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
অন্যদিকে সামিনা লুৎফা লিখেছেন, শিল্পকলার কার্যক্রম আইনানুগভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। “বেআইনি কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রাখতে চাই না”—উল্লেখ করে তিনিও একই অভিযোগ করেন যে পরিষদকে ইচ্ছাকৃতভাবে অকার্যকর রাখা হয়েছে।
শিল্পকলা একাডেমি আইন, ১৯৮৯–এর ১২(১) উপধারা অনুযায়ী পরিষদের প্রতি তিন মাসে একবার বৈঠক করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু গত এক বছরে মাত্র একবার সভা হয়েছে—২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর। এরপর থেকে আর কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। আজাদ আবুল কালাম এ অবস্থাকে ‘আইনের গুরুতর লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেছেন।
পরিষদের সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন একাডেমির মহাপরিচালক। সংস্কৃতি উপদেষ্টা পদাধিকার বলে পরিষদের সভাপতি। কিন্তু গত ৯ মাসে কোনো সভা না হওয়ায় প্রশাসনিক স্থবিরতা ও ‘আইনগত ব্যত্যয়’-এর অভিযোগ জোরদার হয়েছে।
এর আগে গত জুলাইয়ে শিল্পকলার চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান পদত্যাগ করেন। একই মাসের শেষে পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন লেখক-গবেষক আলতাফ পারভেজ। মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদও ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব ছাড়েন। সর্বশেষ একসাথে চার সদস্যের পদত্যাগ একাডেমিকে নতুন সংকটে ফেলেছে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে—এই পরিষদের সদস্যরা এতদিন কোথায় ছিলেন? প্রায় এক বছর ধরে সভা হয়নি, আইন ভঙ্গ হয়েছে, পরিষদ অকার্যকর থেকেছে—তবু সদস্যরা পদে থেকেছেন। এখন কেন এই হঠাৎ ‘নৈতিক অবস্থান’ গ্রহণ? সমালোচকদের মতে, দীর্ঘদিন অকার্যকর কাঠামোয় থেকেও দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখানো হয়নি, অথচ এখন ‘নৈতিক কারণে’ পদত্যাগ কিছুটা দেরিতে আসা নৈতিকতার প্রদর্শনী।
মহাপরিচালক রেজাউদ্দিন স্টালিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পদত্যাগপত্রগুলো যথানিয়মে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তবে পরিষদে ক্রমাগত পদত্যাগের কারণে একাডেমির কার্যক্রম কীভাবে চলবে, তা নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উদ্বেগ বাড়ছে।