জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সুপারিশমালা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেছেন, কমিশন বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উপেক্ষা করে প্রতারণা করেছে। অবিলম্বে সুপারিশ সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক এহসান মাহমুদের গ্রন্থ ‘বিচার সংস্কার নির্বাচন: অন্তবর্তী আমলে বাংলাদেশ’ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ফখরুল বলেন, “আমরা যেসব সুপারিশে একমত নই, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলাম। কমিশন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু প্রকাশিত সুপারিশে তা নেই। এটি জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণা।”
তিনি কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সঠিক সংস্কার করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে। যদি তা না হয়, তার দায় আপনাকেই নিতে হবে।”
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ হস্তান্তর করে। সেখানে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। জামায়াত চায় নভেম্বরেই গণভোট, বিএনপি চায় জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট হোক।
বিএনপি এই আগাম গণভোটের প্রস্তাবে ‘দুরভিসন্ধি’ দেখছে। ফখরুল বলেন, “গণভোট ও নির্বাচন একসঙ্গে করাই যুক্তিযুক্ত। আলাদা করে করলে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা বাড়বে।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপির জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে। অথচ আমাদের সংস্কারবিরোধী বলা হচ্ছে—এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা। আমরা প্রেসিডেন্সিয়াল থেকে পার্লামেন্টারি সরকারব্যবস্থা এনেছি, মিডিয়ার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছি, কেয়ারটেকার ব্যবস্থা সংসদে পাস করেছি। বিএনপি কখনো সংস্কারবিরোধী ছিল না।”
নির্বাচন বিলম্বিত হওয়াকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, “নির্বাচন যত দেরি হচ্ছে, ততই ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরই নির্বাচন চেয়েছিলাম। তখন বলা হয়েছিল, আমরা ক্ষমতা চাই। এখন প্রমাণিত হচ্ছে, দ্রুত নির্বাচনই ছিল সঠিক দাবি।”
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, চর্চা ডটকমের সম্পাদক সোহরাব হাসান, সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নী ও গ্রন্থের লেখক এহসান মাহমুদ।
বিএনপি মনে করে, সব রাজনৈতিক দলের মতামত ও দ্বিমত অন্তর্ভুক্ত করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনই দেশের সংকট সমাধানের পথ। এজন্য তারা কমিশনের সুপারিশ পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।